অভিজাত হোটেলে চলছিল বউভাতের আয়োজন। কিন্তু বর সেখানে নেই। আগের দিন রাতেই অন্য মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে ওই বরকে হাজতে আটক রেখেছে পুলিশ। শুক্রবার খুলনা নগর থানায় ওই হোটেল থেকে বউভাতের খাবার পাঠানো হয়। পরে হাজাতখানায় বসেই নিজের বউভাতের অনুষ্ঠানের খাবার খেয়েছেন বর। ধর্ষণে অভিযুক্ত ওই বরের নাম শিঞ্জন রায় (২৫)। তিনি খুলনার আয়কর অফিসের এক কর্মকর্তার ছেলে।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে শিঞ্জন রায় বিয়ে করেন। বৃহস্পতিবার খুলনা নগরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শিঞ্জনের বিরুদ্ধে সোনাডাঙ্গা থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করেন। ওই ছাত্রী দাবি করেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শিঞ্জন রায় তাঁকে আলাদা এক বাড়িতে নিয়ে রেখেছিলেন। বর্তমানে তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
শুক্রবার দুপুরে ওই ছেলের বিরুদ্ধে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা করেন ওই মেয়ে। পরে বিকেলের দিকে আদালতের মাধ্যমে শিঞ্জনকে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। অভিযোগকারী মেয়েটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শিঞ্জন রায় এবং অভিযোগকারী ওই মেয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। দুই বছর আগে শিঞ্জনের সঙ্গে ওই মেয়ের পরিচয় হয়। এক বছর আগে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি জানতে পারেন শিঞ্জনের পরিবারের সদস্যরা। এ কারণে তড়িঘড়ি করে ছেলের বিয়ের আয়োজন করেন তাঁরা। গত বুধবার শিঞ্জনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়। এ খবর পেয়ে মেয়েটি গত বৃহস্পতিবার রাতে শিঞ্জনের বাড়ির সামনে যান। মেয়েটি বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে শিঞ্জন তাঁকে সেখান থেকে জোর করে অটোরিকশায় তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হলে স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দেয়। সোনাডাঙ্গা থানা-পুলিশ রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলে-মেয়েকে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় মেয়েটি পুলিশের কাছে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন। এরপর পুলিশ শিঞ্জনকে থানাহাজতে আটক রাখে।
ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য শুক্রবার সকালে মেয়েটিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়। সকালে ওসিসির সামনে গিয়ে দেখা যায়, শিঞ্জনের বাবা ও মা মেয়েটির সঙ্গে কথা বলছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁদের সোনাডাঙ্গা থানায় গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এহসান শাহ বলেন, ভুক্তভোগী মেয়েটি বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেছেন। শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে শিঞ্জনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে সোনাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. তৌহিদুর রহমানকে। তিনি বলেন, আসামি শিঞ্জন রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুলনার মহানগর হাকিম আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তবে শুনানির দিন ধার্য হয়নি।