মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় ড্রেজার (খননযন্ত্র) দিয়ে পদ্মা নদীর বালু তুলে বিক্রি করছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এভাবে বালু তোলায় নদীভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শক্তিশালী ভাসমান ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে কার্গো জাহাজে করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন বালু ব্যবসায়ীরা। বালু উত্তোলন বন্ধে এলাকাবাসী সোচ্চার হলে রাতের অন্ধকারে বালু তোলা হয়। মাঝেমধ্যে দিনেও বালু তোলা হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিল্লাল হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের লোকজনসহ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি এই বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, হরিরামপুরের প্রধান সমস্যা নদীভাঙন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১০টিই পদ্মার ভাঙনের শিকার। এর মধ্যে গোপীনাথপুর, রামকৃষ্ণপুর, লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ি, বয়ড়া, ধুলশুড়া ও হারুকান্দি ইউনিয়নের অনেক এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ বছর গোপীনাথপুর ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয়েছে। আর তীব্র স্রোতের মধ্যেই ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের কারণে ভাঙন তীব্রতর হয়। নদীভাঙন বন্ধে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
জেলা পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং সরকারের যৌথ অর্থায়নে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর এলাকা থেকে ধুলশুড়া ইউনিয়নের মির্জানগর পর্যন্ত পদ্মার উত্তর পাড়ে প্রায় ৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফ্লাড অ্যান্ড রিভার ব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট কর্মসূচির আওতায় ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি গুচ্ছে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়।
বালু উত্তোলন বন্ধে প্রায় তিন বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন এলাকাবাসী। ভাঙনের ভয়াবহতা নিয়ে জনসচেতনতায় বিভিন্ন সময় লিফলেট বিতরণ ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করছে ‘পদ্মার ভাঙন থামাও, হরিরামপুর বাঁচাও’ নামের স্থানীয় একটি সংগঠন। উপজেলা প্রশাসন বলছে, বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর উদ্যোগ নিলেই তাঁরা ড্রেজার নিয়ে পালিয়ে যান।
গতকাল শুক্রবার উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ এবং গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চালান পদ্মার ভাঙন থামাও, হরিরামপুর বাঁচাও সংগঠনের সদস্যরা। সংগঠনের সদস্য মুনশী সোহাগ বলেন, রাতের আঁধারে নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিগত সময়ে বালু তোলার কারণে রামকৃষ্ণপুর এবং গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নদীতে প্রবল ভাঙন শুরু হয়। এতে শত শত বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে আজিমনগর ইউনিয়নে পদ্মায় একটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায়। তবে ড্রেজার মালিক এবং বালু ব্যবসায়ীদের পরিচয় প্রকাশে অপারগতা জানান ড্রেজারের শ্রমিকেরা। এদিকে উপজেলা সদরের মধ্যকান্দি বয়ড়া এলাকায় স্তূপ করা বালু সরানোর যন্ত্র বসানো হয়েছে। নদী থেকে মাটি কেটে কার্গোতে করে এনে এই বালু যন্ত্রের সাহায্যে নদীর পাড়ে ফেলা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, তাঁর অনুসারী কিছু নেতা-কর্মী সিরাজগঞ্জ ও পাবনা থেকে বালু কিনে মধ্যকান্দি বয়ড়া এলাকায় নামাচ্ছেন। তবে তা দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। পদ্মা থেকে বালু উত্তোলনের সঙ্গে তাঁর কোনো লোক জড়িত নন। তবে তাঁর দলের উপজেলায় যাঁরা নেতৃত্ব দেন, তাঁরা পদ্মা থেকে বালু উত্তোলন করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ ছাড়া ফরিদপুর থেকে কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী পদ্মা থেকে মাঝেমধ্যে রাতে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলিয়াস মেহেদী বলেন, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলায় বেশ কয়েকজনকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। পাঁচটি ড্রেজার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরও রাতে নদী থেকে কেউ কেউ বালু উত্তোলন করেন। সম্প্রতি বালু তোলা বন্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে হয়েছে। তবে অভিযানের খবর পেয়ে বালু ব্যবসায়ীরা ড্রেজার নিয়ে পালিয়ে যান। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।