মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আবদুল মান্নানের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এতে তিনি আহত হন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মাগুরা-মহম্মদপুর সড়কের তল্লাবাড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাঁকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলাকারীরা মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শিকদার মিজানুর রহমানের স্বজন ও সমর্থক বলে আবদুল মান্নান দাবি করেছেন।
এ ঘটনার পর আবদুল মান্নানের সমর্থকেরা তল্লাবাড়িয়া এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত মাগুরা-মহম্মদপুর সড়ক অবরোধ করে রাখেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আবদুল মান্নানের সমর্থক আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী শিকদার মিজানুর রহমানের ইটভাটা, গুদাম ভাঙচুর করেন ও আগুন ধরিয়ে দেন। পরে হামলাকারীরা বিনোদপুরে তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। হামলাকারীরা ঘুল্লিয়া গ্রামে মিজানুর রহমানের চাচাতো ভাই নঈম শিকদারের বাড়িসহ আরও চার-পাঁচটি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ৬৬টি গুলি ছোড়ে।
আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে জানান, উপজেলার বেথুলিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে মাগুরা জজকোর্টে যাচ্ছিলেন। তিনি মোটরসাইকেলের পেছনে বসে ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মহম্মদপুর-মাগুরা সড়কের তল্লাবাড়িয়া এলাকায় পৌঁছালে চার-পাঁচজন যুবক সড়কে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে তাঁদের থামান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই যুবকেরা লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এতে তিনি আহত হন। এ সময় এলাকার লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। পরে তিনি মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন।
গ্রাম্য একটি ঘটনা নিয়ে বিনোদপুর ইউপির চেয়ারম্যান শিকদার মিজানুর রহমানের সঙ্গে তাঁর ফুফাতো ভাইদের বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিলে আবদুল মান্নান মধ্যস্থতা করে মিটিয়ে দেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শিকদার মিজানুর রহমানের ভাগনের নেতৃত্বে তাঁর ওপর ওই হামলা চালানো হয় বলে আবদুল মান্নান দাবি করেন।
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আবদুল মান্নান প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব সাইফুজ্জামান শিখর ও চেয়ারম্যান শিকদার মিজানুর রহমান যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী বীরেন শিকদারের অনুসারী। এ দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে নানা বিষয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ ঘটনাও তার অংশ। আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে আবদুল মান্নানের ওপর হামলার ঘটনায় জেলা আইনজীবী সমিতি দুপুরে জেলা জজ আদালতের সামনে সড়কে মানববন্ধন করে। তারা ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার প্রতিবাদে দুপুরে মানববন্ধন করা হয়। এ ছাড়া আইনজীবী সমিতি জরুরি ভিত্তিতে সভা ডাকে। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে লিখিত দেওয়া হয়।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে মোট ৬৬টি গুলি ছোড়া হয়েছে। চেয়ারম্যান ও তাঁর চাচাতো ভাইয়ের বাড়িসহ তিনটি বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
জিজ্ঞেস করা হলে মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরীকুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। কোনো পক্ষই মামলা করেনি।