চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে বানানো আধা কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তার মাঝের কিছু অংশ দুর্বৃত্তরা কেটে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার রাতে উপজেলার শাহপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে কয়েক দিন ধরে ছয় গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলাকারই কিছু ব্যক্তি শত্রুতা করে এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাস্তাটি উপজেলার নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামে অবস্থিত। ওই গ্রামের তিন রাস্তার মোড় থেকে জনৈক আফতাব উদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত আধা কিলোমিটার দীর্ঘ ও ছয় ফুট চওড়া রাস্তাটি এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে গত মে মাসে বানানো হয়। উপজেলার নায়েরগাঁও দক্ষিণ, খর্গপুর, আশ্বিনপুর, নারায়ণপুর, খিদিরপুর ও শাহপুর গ্রামের লোকজনের চলাচলের সুবিধার্থে এ কাঁচা রাস্তাটি তৈরি করা হয়। এ রাস্তার ওপর দিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০ হাজার লোক যাতায়াত করে।
আজ শুক্রবার শাহপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার ওই কাঁচা রাস্তাটির একটি জায়গার মাঝখানে ছয়-সাত ফুট অংশ কাটা। মাটি সরিয়ে নেওয়ায় সেখানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই গর্তের ওপর আপাতত একটি কাঠ বিছানো হয়েছে। ওই কাঠের ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে লোকজন।
শাহপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সামাদ ও দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারী অভিযোগ করেন, রাস্তাটি বানানোর জন্য গত মার্চ-এপ্রিল মাসে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় থেকে কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাঁদের গ্রামের মো. ওয়ালিউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি ওই বরাদ্দ পান। কিন্তু ওয়ালিউল্লাহ কাজটি না করে বরাদ্দের চাল আত্মসাৎ করেন। এতে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হন। পরে গত মে মাসে গ্রামবাসীর উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রাস্তাটি তৈরি করা হয়।
গ্রামবাসী অভিযোগ করেন, রাস্তাটি তৈরি করার সময় ওয়ালিউল্লাহ নানাভাবে এর বিরোধিতা করেন এবং রাস্তাটি নষ্ট করার অভিযোগ করে একাধিক ব্যক্তিকে হুমকি দেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল না করার জন্য শাসিয়ে দেন, চলাচলেও বাধা দেন। গত সোমবার মধ্যরাতে ওয়ালিউল্লাহ এবং তাঁর কয়েকজন সহযোগী রাস্তাটির মাঝখানের ছয়-সাত ফুট জায়গা কেটে ফেলেন। এতে সেখানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয় এবং লোকজনের চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় গত পাঁচ দিন ধরে এলাকাবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আপাতত ওই গর্তের ওপর একটি কাঠ বিছিয়ে চলাচল করলেও তা ঝুঁকিপূর্ণ। স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীরা ওই কাঠের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই আসা-যাওয়া করছে। বিষয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় ও পুলিশকে জানানো হয়।
আশ্বিনপুর ও নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, ‘ওই রাস্তা দিয়া প্রতিদিন আমাদের স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। এটা কেটে ফেলায় এখন আমাদের স্কুলে যেতে-আসতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। বিছানো চিকন কাঠটার ওপর দিয়া পা রাখলে মাঝে মাঝে গর্তে পড়ে ব্যথা পাই।’
অভিযোগের ব্যাপারে মো. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা চাল আত্মসাতের অভিযোগ সত্য নয়। এ ছাড়া ওই রাস্তাটি তিনি বা তাঁর সহযোগীরা কাটেননি। শত্রুতাবশত তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আওরঙ্গজেবের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। ওই কার্যালয়ের কর্মচারী মো. আবদুল আজিজ বলেন, তাঁর কার্যালয়ের কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাবেন।
মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার আইচ বলেন, বিষয়টি কেউ তাঁকে জানায়নি। রাস্তা কাটার পর সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।