গাজীপুরের শ্রীপুরে বস্তায় পাওয়া ছয় টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন নিহত ব্যক্তির স্ত্রী জীবন্নাহার। বেতনের টাকা নিয়ে কলহের জের ধরে তিনি তাঁর স্বামীকে হত্যা করে প্রথমে ওয়ার্ডরোবে রেখে যান। এরপর লাশ কয়েক টুকরা করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন।
আজ শনিবার দুপুরে গাজীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জীবন্নাহারের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার এসব তথ্য জানান। এ সময় জীবন্নাহার উপস্থিত ছিলেন।
পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার উলামাকান্দি এলাকার আবদুল লতিফের ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিষমপুর গ্রামের চানমিয়ার মেয়ে জীবন্নাহারের বিয়ে হয়। তাঁদের ঘরে মারিয়া আক্তার রোজা নামের চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। রোজা বেশির ভাগ সময়ই তার নানার বাড়িতে থাকত। ঘটনার দিনও রোজা বাসায় ছিল না।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, চাকরির সুবাদে স্বামী রফিকুল ইসলাম জীবন্নাহারকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ির মেঘনা কারখানার সীমানাপ্রাচীরের পাশে গিলার চালা এলাকার আবদুল হাই মাস্টারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। রফিকুল স্থানীয় হাউ আর ইউ টেক্সটাইল কারখানায় লোডার পদে এবং জীবন্নাহার স্থানীয় মেঘনা নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় সুইং অপারেটর পদে চাকরি করেন। স্বামী বেতন পেতেন সাত হাজার টাকা আর স্ত্রী বেতন পান ১৩ হাজার টাকা। বিভিন্ন সময় রফিকুল জীবন্নাহারকে বেতনের টাকা তাঁর কাছে দিতে বলতেন। কিন্তু জীবন্নাহার বেতনের টাকা তাঁর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো। সপ্তাহখানেক আগে জীবন্নাহার স্বামীকে ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয় এবং একপর্যায়ে স্ত্রীকে থাপ্পড় মেরে তিনি শুয়ে পড়েন। এ সময় জীবন্নাহার ইট দিয়ে রফিকুলের মাথায় আঘাত করলে তিনি খাট থেকে পড়ে যান। এরপর জীবন্নাহার ইট দিয়ে স্বামীর মাথায় ক্রমাগত আঘাত করলে অচেতন হয়ে পড়েন রফিকুল ইসলাম। একপর্যায়ে জীবন্নাহার গামছা দিয়ে রফিকুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘরে থাকা ওয়ার্ডরোবে লাশটি লুকিয়ে রেখে কারখানায় চলে যান। কারখানা থেকে রাত ১১টার দিকে বাসায় ফিরে তিনি লাশটি বের করে কয়েক টুকরো করেন। পরে মাথা-হাত-পা বিচ্ছিন্ন দেহাংশটি বস্তায় ভরে পাশের বাঁশঝাড়ে, পা দুটি অদূরে টয়লেটের পাশে এবং মাথা, দুই হাতের অংশগুলো ময়লার ড্রেনে ফেলে দেন। পরদিন সকালে এলাকাবাসী বাঁশঝাড়ের নিচে রক্তমাখা বস্তা ও লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। শ্রীপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই খণ্ডিত লাশ উদ্ধার এবং জীবন্নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদকালে জীবন্নাহার খুনের ঘটনা স্বীকার করেন।
শ্রীপুর থানার ওসি মো. জাবেদুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে রফিকুলের বাবা আবদুল লতিফ বাদী হয়ে জীবন্নাহারকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় আটক জীবন্নাহারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শামসুন্নাহারসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ, শ্রীপুর থানার ওসি মো. জাবেদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।