স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষা করবে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বাবুলের হাতের লেখা পরীক্ষার জন্য পিবিআই ১৪ মার্চ আদালতে আবেদন করেছে। ২২ মার্চ বাবুলের উপস্থিতিতে তাঁর হাতের লেখার নমুনা নেওয়ার তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, মাহমুদা হত্যা মামলায় আলামত হিসেবে জব্দ করা জিনিসপত্রের মধ্যে একটি বই আছে। বইটি এক নারীর কাছ থেকে বাবুল উপহার পেয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। বইয়ের তৃতীয় পাতায় একজনের হাতে লেখা কিছু বিবরণ পাওয়া গেছে। একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠার (২৭৬) পরের পাতায় আরেকজনের হাতে লেখা কিছু বিবরণ দেখা গেছে। বিবরণ দুটি ইংরেজিতে লেখা। তবে তা পৃথক ব্যক্তির লেখা। সম্পর্ক নিয়ে এ লেখা সন্দেহ বাড়াচ্ছে। এতে পরিচয়, সাক্ষাৎসহ নানা বিষয় আছে।
আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বইয়ের তৃতীয় পাতায় থাকা হাতের লেখা ওই নারীর বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আর বইয়ের শেষ পৃষ্ঠার পরের পাতায় থাকা লেখা বাবুলের বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এখানে বাবুলের হাতের লেখা আছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা নিতে আদালতে আবেদন করা হয়। ২২ মার্চ বাবুলের উপস্থিতিতে তাঁর হাতের লেখার নমুনা নেওয়ার তারিখ রেখেছেন আদালত। নমুনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বইয়ের লেখার সঙ্গে বাবুলের হাতের লেখার মিল আছে কি না, তা যাচাই করা হবে।
গত বছরের মে মাসে মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলার এজাহারে এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বাবুল তাঁর স্ত্রী মাহমুদাকে খুন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
সবশেষ ২ মার্চ ঢাকার বনশ্রীর বাসায় পিবিআই চট্টগ্রামের একটি দল বাবুলের শ্বশুরপক্ষের লোকজনের সাক্ষ্য নেয়। এ সময় তাঁরা একই অভিযোগ করেন।
বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত থাকাকালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মকর্তার সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক হয়। এ সম্পর্কের জেরে তাঁর মেয়েকে বাবুল প্রায়ই নির্যাতন করতেন। বিষয়টি নিয়ে সে সময় পারিবারিকভাবে সালিসও হয়। ওই নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্কের আলামত হিসেবে চিঠি, উপহারসহ নানা কাগজপত্র পিবিআইকে দেওয়া হয়েছে।
পিবিআই সূত্র জানায়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাবুল কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কক্সবাজারের যে বাসায় ওই নারী থাকতেন, সেই বাসার নিরাপত্তাকর্মী সরওয়ার আলম ও গৃহকর্মী পম্পি বড়ুয়া গত ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলমের আদালতে মামলার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে দুজনই কক্সবাজারে ওই নারীর বাসায় বাবুলের যাতায়াতের বর্ণনা দেন।
স্ত্রী হত্যা মামলায় বাবুল এখন কারাগারে। বাবুলের ছোট ভাই হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জানামতে, বাবুলের সঙ্গে কোনো নারীর সম্পর্ক ছিল না। এখন তাঁকে ফাঁসানোর জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব বলা হচ্ছে।
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘যে নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাঁকে আগে খুঁজে বের করুক পিবিআই। তা না করে হাতের লেখা নিয়ে পিবিআই দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে।’
ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকায় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
মাহমুদা হত্যার পরদিন ২০১৬ সালের ৬ জুন বাবুল বাদী হয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে পিবিআই গত বছরের ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।
একই দিন বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়।
মোশাররফের মামলায় পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে ৬ মার্চ আদালত তা গ্রহণ করে।
অন্যদিকে বাবুলের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালত গ্রহণ করেননি। আদালতের নির্দেশে গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।