নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে না দেওয়ায় কুমিল্লার দেবীদ্বারে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বিদ্যালয় লাগোয়া মা মণি জেনারেল হাসপাতালের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার ওই শিক্ষকের নাম মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দেবীদ্বার রেয়াজ উদ্দিন পাইলট মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার টিয়ারা গ্রামে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম ইকবাল হোসেন। জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, ওই হামলায় ইকবালের সঙ্গে তাঁর ৩০ থেকে ৪০ জন অনুসারীরা অংশ নেয়। হামলার পর পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।
প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত মাসে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা হয়। এতে ৩৯৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০০ জন উত্তীর্ণ হয়ে। ৯৮ জন নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারবে না— এই নির্দেশনা ও পরিপত্র রয়েছে। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডও চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে। কিন্তু উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন তাঁর ১০ থেকে ১২ জন লোককে ফরম পূরণের জন্য চাপ দেন।
প্রধান শিক্ষকের ভাষ্য, তিনি ইকবালের ওই প্রস্তাবে রাজি হননি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় দিকে ইকবালের নেতৃত্বে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন বিদ্যালয়ে আসেন। জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ এই সময়ে আমি তাঁদের বলি বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা হচ্ছে। বাইরে গিয়ে কথা বলেন। পরে তাঁদের সঙ্গে আমি মা মণি জেনারেল হাসপাতালে যাই। সেখানে অতর্কিতভাবে আমাকে কিলঘুষি ও লাথি মারেন উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও তাঁর অনুসারীরা। এই সময়ে আমার পায়ের রগে আঘাত পাই। তাঁরা পুরো শরীরে মেরে জখম করে। খবর পেয়ে দেবীদ্বার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল আনোয়ার ঘটনাস্থল থেকে আমাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।’
প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘আমার ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এমন ঘটনা ঘটেনি। এই বিদ্যালয়ে আমি ১২ বছর প্রধান শিক্ষকের চাকরি করছি। আর চাকরি মেয়াদ আছে দুই থেকে আড়াই বছর। এটি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমি এর বিচার চাই। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমি ঢাকায় যাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন বলেন,‘ আমি দেবীদ্বারের ইত্তেফাকের প্রতিনিধি, আনন্দ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি ও দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। আমরা কয়েকজন সাংবাদিক প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি নিউজের বক্তব্য আনতে গিয়েছিলাম। তখন তাঁর সঙ্গে সামান্য কথা-কাটাকাটি হয়েছে। তেমন কিছু না।’
ওসি জহিরুল আনোয়ার বলেন,‘ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের কথা-কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ নিয়ে কোনো মামলা হয়নি।’
দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাকিব হাসান বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। প্রধান শিক্ষক আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’