ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় আজ রোববার কোনো ক্লাস হয়নি। ওই কেন্দ্রে গতকাল শনিবার এক আলিম পরীক্ষার্থী ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর এমনটা ঘটেছে। তবে ক্লাস বন্ধের বিষয়টি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের না জানানোয় তারা সকালে মাদ্রাসার সামনের সড়কে ও গেটে ভিড় করতে থাকে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে তারা ক্লাস শেষ করে বাড়িতে চলে যায়। এরপর কখন মাদ্রাসা বন্ধ করা হয়েছে তা তারা শোনেনি। এ জন্য তারা আজ সকালে ক্লাস করতে আসে। গেট বন্ধ দেখে তারা মাদ্রাসার সামনের সড়কে অবস্থান করে। কিছুক্ষণ পর মাদ্রাসার এক অফিস সহকারী এসে মাদ্রাসা বন্ধের বিষয়টি তাদের জানায়।
মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শাহ নেওয়াজ নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, মাদ্রাসা বন্ধের বিষয়ে তাদের কিছুই জানানো হয়নি। তাই তারা ক্লাস করতে মাদ্রাসায় এসে বন্ধের কথা শুনে বাড়ি চলে যাচ্ছে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী আকলিমা আক্তার জানায়, আলিম পরীক্ষা চলাকালে সকাল সাতটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত মাদ্রাসায় তাদের নিয়মিত ক্লাস হয়। গতকাল ক্লাস শেষে তারা বাড়ি চলে যায়। আজ এসে এই অবস্থা দেখে।
মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল খায়ের ও রেজাউল হক বলেন, তাঁরাও মাদ্রাসা বন্ধের বিষয়টি শুনেননি। তাঁরা ক্লাস নিতে মাদ্রাসায় যান। ভেতরে ঢোকার পর অফিস সহকারীর মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন, মাদ্রাসা আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আর মাদ্রাসার অফিস সহকারী মো. নুরুল আমিন বলেন, গতকাল দুপুরে সিদ্ধান্ত নিয়ে অনিবার্য কারণে মাদ্রাসা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু আলিম পরীক্ষা চলবে।
তবে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মাদ্রাসায় ঘটে যাওয়া ঘটনার কারণে শুধুমাত্র আজকের জন্য মাদ্রাসা বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আজ মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিকেএম এনামুল করিমের দপ্তরে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় মাদ্রাসার ভেতরে আগুনে দগ্ধ হওয়া শিক্ষার্থীর ঘটনা এবং মাদ্রাসায় ক্লাস চলবে কিনা, তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা শ্লীলতাহানি করেন অভিযোগে মামলা হয়েছে। ছাত্রীর মায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ এখন কারাগারে। ওই ছাত্রীর ভাইয়ের অভিযোগ, গতকাল তাঁর বোন পরীক্ষা দিতে গেলে অধ্যক্ষের অনুগত কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই ছাত্রীকে মামলা তুলে নিতে বলে। ছাত্রীটি রাজি না হওয়ায় তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় তারা। মেয়েটি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন।
সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মাদ্রাসাটি পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মাদ্রাসার একজন শিক্ষক ও এক ছাত্রকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।