সীমানাবেষ্টনী ও তল্লাশিকেন্দ্র নেই, সহজে হচ্ছে গাছ চুরি

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সীমানার কোনো পাশেই বেষ্টনী নেই। এর ভেতর দিয়ে যাওয়া কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কে তল্লাশিচৌকিও নেই। এ কারণে উদ্যানটি অরক্ষিত রয়েছে। ফলে এখান থেকে গাছ কেটে সহজেই পাচার করছে চোরাকারবারিরা।

১৯৯৬ সালে পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনের ১ হাজার ২৫০ হেক্টর এলাকা নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে বন বিভাগ। এরপর থেকে এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন বেড়ে চলেছে। এ ছাড়া কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার অংশ উদ্যানটির ভেতরে পড়েছে।

লাউয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জির অধিবাসীসহ বনের লোকজন বলেন, উদ্যানটি অরক্ষিত থাকায় এর মধ্যে যেকোনো পাশ দিয়ে যে কেউ ঢুকে আবার বের হতে পারে। এর ভেতর রাস্তা দিয়ে চলা যানবাহনের একটি অংশ ব্যবহার করে গাছ চোরচক্র। কুরমা-আদমপুর-কমলগঞ্জ সড়কে চণ্ডীপুর এলাকায় বন বিভাগের তল্লাশিকেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু উদ্যানের ভেতর কোথাও তা নেই। এ কারণে চোরেরা গাছ কেটে রাতে তা ট্রাক, পিকআপ ভ্যান এমনকি মাইক্রোবাসে করে পাচার করছে।

খাসিয়াপুঞ্জিটির হেডম্যান ফিলা পত্মীসহ বনবাসী কয়েকজন বলেন, অল্প জনবল নিয়ে বনকর্মী ও খাসিয়ারা উদ্যানের ভেতরের মূল্যবান গাছগাছালি পাহারা দিয়ে রাখলেও সড়কের ধারের গাছগাছালি ঠিকমতো পাহারা দেওয়া যায় না। এ সুযোগে মাসে ১০ থেকে ১৫ দিন এ সড়ক ধার থেকে দু-তিনটি করে মূল্যবান গাছ কেটে নিচ্ছে চোরচক্র। এ ছাড়া রাতে সাধারণত বন্য প্রাণী চলাচল করে। এ সময় প্রায়ই এসব প্রাণী যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে সহকারী বন সংরক্ষক (বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সহব্যবস্থাপনা বিভাগ) মো. তবিবুর রহমান বলেন, এ সড়কটির গতিপথ পরিবর্তন করে নূরজাহান-মাধবপুর সড়ক হয়ে হীড বাংলাদেশ অফিসের সামনে দিয়ে আবার কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কে মিলিত করার একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন আছে। এ কাজ হলে উদ্যানটি থেকে গাছ পাচার অনেকটা কমে যাবে এবং বন্য প্রাণীর নিরাপত্তা জোরদার হয়ে যাবে।

জানতে চাইলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সহব্যবস্থাপনা বিভাগ) মিহির কুমার দো প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় উদ্যানের বন্য প্রাণী ও গাছগাছালির নিরাপত্তার কথা ভেবেই এক মাস আগে ঢাকায় বন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখানে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ একটু ঘুরিয়ে আবারও কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কে মিলিত করার একটি প্রস্তাবনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।