ঢাকার অদূরে সাভারে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। শ্রমিকদের দাবি, পুলিশের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকও বলছেন, নিহতের বুকে গুলির ক্ষতচিহ্ন আছে। মঙ্গলবার বিকেলের দিকে উলাইলে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত শ্রমিক সুমন মিয়ার গ্রামের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে। মজুরি বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে সারা দিন সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে পোশাক শ্রমিকদের অসন্তোষ ছিল। এর মধ্যে একাধিক স্থানে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সরেজমিন ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, বেলা দুইটার দিকে সাভারের উলাইলে টেন্ডার গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। সেখানে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শ্রমিকদের থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় পাশের আনলিমা টেক্সটাইলের শ্রমিক সুমন মিয়া গুলিবিদ্ধ হন বলে কারখানার শ্রমিকেরা দাবি করেছেন। প্রথমে তাঁকে কারখানাটির ভেতরের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়া হয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, এরপরই পুলিশ কারখানার ভেতর ঢুকে সুমনকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিকেরা বাধা দিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে সুমনকে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় ১১ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ বলে শ্রমিকেরা জানায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, এর আগে সকাল থেকেই সাভারের হেমায়েত পুরের বাগবাড়ি, উলাইল, আশুলিয়ার কাঠগড়া, পুকুরপাড়, খেজুরটেক এসব এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ ছিল। এর মধ্যে সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বাগবাড়ি এলাকার স্টান্ডার্ড ও ডাড গ্রুপ গ্রুপের শ্রমিকদের সঙ্গে শিল্প পুলিশ ও থানা-পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সব ঘটনায় পুলিশের ১২ সদস্যসহ অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিন শ্রমিক ও এক বাড়ির মালিক গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধরা সবাই রাবার বুলেটে আহত বলে জানা গেছে।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম বলেন, সুমন নামের এক শ্রমিককে পুলিশ ও শ্রমিকেরা মিলে হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বুকে ক্ষত রয়েছে। যা দেখে মনে হয়েছে এটা বুলেট ইনজুরি। মৃত ঘোষণার পর পুলিশ তাঁর লাশটি হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান সাফিউর রহমান বলেন, মারা যাওয়া শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার পরে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে তিনি কীভাবে মারা গেছেন। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি ঘটনা করা হতে পারে।
এর আগে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সানা শামীমুর রহমান বলেন, হেমায়েতপুরের সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থল থেকে দুটি পেট্রল বোমা জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে প্রথম আলোর শেরপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সাভারে নিহত শ্রমিক সুমন মিয়া কলাকান্দা গ্রামের আমের আলীর ছেলে। সন্ধ্যার সময় তাঁর গ্রামের বাড়িতে মৃত্যু সংবাদ পৌঁছায়। সংবাদ শোনার পর থেকে সুমনের মা ফিরোজা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
সুমনের বড় বোন তাছলিমা বেগম বলেন, তাঁরা দুই ভাই ও তিন বোন। সুমন ছিলেন সবার ছোট। প্রায় এক বছর আগে তিনি (সুমন) বরিশালের মেয়ে তানিয়াকে বিয়ে করেন। স্ত্রীকে নিয়ে সুমন ঢাকায় বাস করেন। সুমনের বাবা আমের আলীও একজন পোশাক শ্রমিক এবং বড় ভাই স্বপন মিয়া গাড়িচালক। পরিবারের এই তিন সদস্যই ঢাকায় থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাছলিমা সুমনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য সরকারের কাছে বিচার দাবি করেছেন।