১৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র। গত রোববার আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে এই অভিযোগপত্র।
গত বছরের ১৬ মে বিকেলে মিরপুরের পল্লবীর সিরামিকস গেট এলাকায় সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
১৫ আসামির ১৩ জন কারাগারে। ৯ জনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। হত্যায় অংশ নেওয়া দুজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত।
সাবেক সাংসদ এম এ আউয়াল জমির দখল টিকিয়ে রাখতে সাহিনুদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় তিনি জেলেও গিয়েছিলেন। জেল থেকে বের হওয়ার পর গত বছরের ১৬ মে সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
রাজধানীর পল্লবীর সাহিনুদ্দিন (৩৩) হত্যা মামলার তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সাবেক সাংসদ এম এ আউয়ালসহ তাঁর ১৫ সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সরকার ১৯৭৫ সালের পরে পল্লবীর বুড়িরটেকসংলগ্ন আলীনগরে সাহিনুদ্দিনসহ অন্যদের জমি অধিগ্রহণ করে। তবে তা দীর্ঘদিন খালি পড়ে ছিল। যাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সাবেক সাংসদ আউয়াল তাঁদের পূর্বপরিচিত। তাঁরা এসব জমি অবমুক্ত করার জন্য আউয়ালের সাহায্য চান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, গত রোববার আদালতে ওই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন সুমন ব্যাপারী, টিটু, কিবরিয়া, মুরাদ হোসেন, আবু তাহের, ইব্রাহিম সুমন, রকি তালুকদার, শফিকুল ইসলাম, তুহিন মিয়া, হারুন অর রশীদ, তারিকুল ইসলাম, নুর মোহাম্মদ, হাসান ও ইকবাল হোসেন। সুমন ও শফিকুল ছাড়া বাকি ১৩ আসামি কারাগারে। তাঁদের মধ্যে ৯ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত বছরের ১৬ মে বিকেলে মিরপুরের পল্লবীর সিরামিকস গেট এলাকায় সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনার ৩১ সেকেন্ডের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুই তরুণ রামদা ও চাপাতি দিয়ে সাহিনুদ্দিনকে কোপাচ্ছেন। পুলিশ ও র্যাব সূত্র জানায়, এ–সংশ্লিষ্ট একটি অডিও ক্লিপ পায় পুলিশ। এতে শোনা যায়, খুনিদের একজন লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়ালকে ফোন করে বলেন, ‘স্যার, ফিনিশ।’ এই কথোপকথনের অডিও-ভিডিও পরীক্ষা করে পুলিশ ও র্যাব নিশ্চিত হয়, সেটি ছিল সুমন ব্যাপারীর কণ্ঠ।
সন্দেহভাজন অভিযুক্তদের মধ্যে মনির ও মানিক র্যাব-পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
সাহিনুদ্দিন মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ডি ব্লকের বুড়িরটেকে থাকতেন। ওই হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর মা আকলিমা আক্তার ২০ জনকে আসামি করে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলা তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাহিনুদ্দিন হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া মনজুরুল হাসান ও মো. বাবুর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
গতকাল রোববার যোগাযোগ করা হয় মামলার বাদী আকলিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাহিনুদ্দিন হত্যায় এজাহারের বাইরে তিনি আরও কিছু আসামির নাম দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেসব নাম নেওয়া হয়নি। তিনি ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ডিবি মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বাদী, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, সাক্ষী, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মামলার তদন্ত শেষ করা হয়েছে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এজাহারের বাইরে আটজন এবং এজাহারভুক্ত ২০ আসামির মধ্যে সাতজন খুনে জড়িত রয়েছে। এর ভিত্তিতেই সাংসদ আউয়ালসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সরকার ১৯৭৫ সালের পরে পল্লবীর বুড়িরটেকসংলগ্ন আলীনগরে সাহিনুদ্দিনসহ অন্যদের জমি অধিগ্রহণ করে। তবে তা দীর্ঘদিন খালি পড়ে ছিল। যাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সাবেক সাংসদ আউয়াল তাঁদের পূর্বপরিচিত। তাঁরা এসব জমি অবমুক্ত করার জন্য আউয়ালের সাহায্য চান। কিন্তু তিনি উল্টো সেখানে আবাসন গড়ে তোলেন। নিজের প্রতিষ্ঠান হাভেলি প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের মাধ্যমে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেন তিনি। জমি দখলে রাখতে আউয়াল ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন।
তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলেন, পৈতৃক জমি ফেরত না পাওয়ায় সাহিনুদ্দিন খুন হওয়ার ২০ দিন আগে সাবেক সাংসদ এম এ আউয়ালের আবাসিক প্রকল্পের একটি প্লটের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলেছিলেন। এরপর সাংসদ আউয়াল দখল পাকাপোক্ত করতে সাহিনুদ্দিন ও তাঁর বড় ভাই মাঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন।