চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমানের হত্যাকারীদের ধরতে কোনো সূত্র খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। তবে পুলিশ বলেছে, সাবিরার মুঠোফোনের কলের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করে তারা হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
গত সোমবার রাতে কলাবাগান ফার্স্ট লেনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের শোয়ার ঘর থেকে চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান ওরফে লিপির রক্তাক্ত ও দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সাবিরার গলা কাটা, পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও পোড়া ছিল। তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (সনোলজিস্ট) ছিলেন।এ ঘটনায় করা মামলাটি কলাবাগান থানা-পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ছায়া তদন্ত করছে।
সাবিরা যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেটিতে তিনটি কক্ষ। একটি কক্ষে তিনি থাকতেন। বাকি দুটি কক্ষে দুই তরুণী থাকতেন। তাঁর পাশের কক্ষে থাকা কানিজ সুবর্ণা মডেলিং করেন। আরেকটি কক্ষে যে তরুণী থাকেন, তিনি ঈদের আগে বাড়িতে গিয়ে আর ঢাকায় ফেরেননি। ওই তরুণী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়েন।
আজ শনিবার পুলিশের নিউ মার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সাবিরার সাবলেট কানিজ সুবর্ণা, তার বন্ধু, বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ও গৃহকর্মী, ভবনের বাসিন্দা ও সাবিরার স্বজনসহ ১৪-১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া ওই ভবন ও আশপাশের বাড়িতে কোনো সিসিটিভি না থাকায় কোনো ফুটেজও পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনা উদ্ঘাটনে সাবিরার জব্দ করা মুঠোফোনটির ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগে গত ৩০ মে সকাল ১০টার দিকে বা তারও আগে চিকিৎসক সাবিরার কাছে কে কে এসেছিলেন বাসার বাইরে থাকায় তা কানিজ দেখেননি বলে দাবি করছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কানিজ সুবর্ণা চিকিৎসক সাবিরার ভাড়া বাসায় সাবলেটে ওঠেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সুবর্ণা বলেছেন ঘটনার দিন সকাল ছয়টায় তিনি প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে যান। তখন সাবিরার কক্ষের দরজা বন্ধ ছিল। সকাল সাড়ে নয়টায় ফিরে এসে তিনি ওই কক্ষ থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন। তখন তিনি দারোয়ানকে ডেকে আনেন। দারোয়ান ডেকে আনেন আরেক নারীকে। এরপর মিস্ত্রি ডেকে এনে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন তাঁরা। তখন কক্ষটিতে আগুন দেখতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেন। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভানোর পর সাবিরাকে বিছানার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখে। আগুন নিভিয়ে একটি চাদর দিয়ে দেহটি তারা ঢেকে দেয়। এরপর কানিজ সুবর্ণা কলাবাগান থানা-পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে সাবিরার লাশ উদ্ধার করে।
অবশ্য মামলার বাদী সাবিরার মামাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার মামলায় একই ফ্ল্যাটে সাবলেটে থাকা কানিজ সুবর্ণাকে সন্দেহ করেন। তবে অপর সাবলেট নুরজাহান ঈদুল ফিতরের আগ থেকে গ্রামের বাড়িতে থাকায় তাকে নিয়ে সন্দেহের কথা বলেননি তিনি।
মামলাটির ছায়া তদন্ত করা ডিবির কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, সাবিরা হত্যাকাণ্ড রহস্যে ঘেরা। তার স্বামী-সন্তান থাকলেও তাদের ছেড়ে তিনি একা আলাদা ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তাকে খুন করে খুনিরা চলে গেলেও দরজা ভাঙার আলামত নেই। তাকে গায়ে আগুনও ধরিয়েও দেওয়া হয়নি। তোশকে ধরে যাওয়া আগুন দেওয়া যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে তিনি দগ্ধ হন। হয়তো পরিচিতরাই পরিকল্পিতভাবে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে গেছে।