বরিশালের আগৈলঝাড়ায় প্রভাবশালীদের দখলে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি জমিতে সাইনবোর্ড টাঙাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বাগধা ইউনিয়নে এ ঘটনায় পাউবোর কার্য সহকারী শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে গতকাল শনিবার আগৈলঝাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও পাউবোর কর্মকর্তারা জানান, বাগধা ইউনিয়নের সাতলা-বাগধা প্রকল্পের অধীন প্রায় ১০ একর জমি ১৯৭৪-১৯৭৫ অর্থবছরে হুকুমদখল করে পাউবো। পরবর্তী সময়ে যা পাউবোর নামে রেকর্ড করা হয়। বাগধা ও চাত্রিশিরা মৌজার বাগধা বাজারের উত্তর পাশে চালকল–সংলগ্ন সাড়ে তিন একর জমি স্থানীয় আবুল কালাম ভাট্টিকে ইজারা দেয় পাউবো। ১৫ বছর ধরে তিনিই ইজারাগ্রহীতা ছিলেন। বর্তমানে জমি ইজারাবিহীন অবস্থায় রয়েছে।
বরিশাল পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান জানান, আবুল কালাম ১৫ বছর ধরে ইজারা নিয়ে জমিটি ভোগ করছেন। বিভিন্ন সমস্যার কারণে গত বছর ইজারা দেওয়া হয়নি। নতুন করে ইজারা দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একাধিক ব্যক্তি ইজারা নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। গত বছর জমি ইজারাবিহীন থাকার কারণে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী সাড়ে তিন একর জমি জবরদখল করেন। এমনকি জমিতে থাকা জলাশয়ের (মৎস্য ঘের) মাছ ধরে নিয়ে গেছেন। বিষয়টি জানার পর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সম্পত্তি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী পাউবোর কার্য সহকারী শরিফুল ইসলামসহ একাধিক কর্মকর্তাসহ জমিতে সাইনবোর্ড টাঙাতে যান।
শরিফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দুপুরে তিনি দুই সহকর্মীকে নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙাতে উপস্থিত হলে স্থানীয় ১২-১৫ ব্যক্তি জমি নিজেদের দাবি করেন এবং সাইনবোর্ড টাঙাতে তাঁদের বাধা দেন। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি ও বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে দখলদার স্থানীয় রিয়াজুল বক্তিয়ার, মামুন বক্তিয়ার, সামছু বক্তিয়ার, আবেদীন বক্তিয়ার ও মাসুম বক্তিয়ার অকথ্য ভাষায় তাঁদের গালিগালাজ করেন। প্রতিবাদ করলে তাঁরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়ে, পিটিয়ে তাঁদের জখম করেন এবং সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে দেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে দখলদার রিয়াজুল, মামুন, সামছু, আবেদীন ও মাসুম হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁরা বলেন, ওই জমির বৈধ মালিক হিসেবে তাঁরা ভোগদখল করছেন।
১৫ বছর ধরে জমির ইজারা গ্রহণকারী আবুল কালাম বলেন, ‘ওই সম্পত্তি কোনো ব্যক্তির নয়, জমির মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। আমি লিজ নিয়ে ১৫ বছর ভোগ করেছি।’
এই বিষয়ে বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, সম্পত্তির বৈধ মালিক পাউবো। দখলদারেরা জোর করে ভোগ করেছেন। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বরিশাল পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, ‘সম্পত্তি দখলমুক্ত ও পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণের জন্য আগৈলঝাড়া নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
ইউএনও বিপুল কুমার দাস বলেন, লিখিত অভিযোগ তিনি পাননি। পেলে গুরুত্ব বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেন, পাউবোর কার্য সহকারী শরিফুল ইসলাম লিখিত এজাহার জমা দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।