কুয়েতে বাংলাদেশি সাংসদ গ্রেপ্তার

সহিদের মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি হচ্ছে কুয়েতে

  • শুনানি শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার থেকে।

  • সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর।

  • আটকাদেশের ১০০ দিন পেরোল।

  • পঞ্চমবারের মতো বেড়েছে কারাবাসের মেয়াদ।

  • প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম চুক্তি নবায়নের অনুরোধও খারিজ।

সাংসদ মোহাম্মদ সহিদ ইসলাম

মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশের সাংসদ মোহাম্মদ সহিদ ইসলামের (পাপুল) বিরুদ্ধে মামলার শুনানি আগামী বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে। গ্রেপ্তারের ১০০ দিন পর তাঁর বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে। সহিদের মামলার সঙ্গে কুয়েতের দুই সাংসদ সাদাউন হামাদ ও সালাহ খুরশিদ, জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল শেখ মাজন আল-জারাহসহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

বাংলাদেশের সাংসদ সহিদসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধ মুদ্রা পাচারের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার হুমকি, ঘুষ লেনদেনসহ নানা ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রমাণ পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন। গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর ১৪ জুন সহিদ ইসলামকে প্রথম কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর গত মাসে পঞ্চমবারের মতো তাঁর কারাবাসের মেয়াদ এক মাস বাড়িয়ে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাসআল রাই-এর গত কয়েক দিনের খবরে বলা হয়েছে, কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল শেখ মাজন আল-জারাহ এবং অন্য দুই সরকারি কর্মকর্তা হাসান আবদুল্লাহ আল খাদের ও নওয়াফ আলী আল শালাহিকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে সহিদকে অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগদানের অভিযোগ আনা হয়েছে।

সাংসদ সহিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় দুই সাংসদসহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

সহিদ ইসলামের বিচারপ্রক্রিয়া যখন পুরোদমে শুরু হয়েছে, তখন তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সেবা পাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে কুয়েতের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সরকারি প্রতিষ্ঠান। কারণ মানব ও মুদ্রা পাচারের অভিযোগ ওঠার পর তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মারাফিয়া কুয়েতিয়াকে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নানা সেবা নিয়ে থাকে ওই সব প্রতিষ্ঠান। এমন পরিস্থিতিতে কুয়েতের সরকারি দরপত্রবিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা সহিদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কাজের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। কুয়েতের একটি মন্ত্রণালয় সহিদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির পরিচ্ছন্নতা কাজের চুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে কুয়েতের সরকারি দরপত্রবিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা তা নাকচ করে দেয়।

কুয়েতের সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মারাফিয়া কুয়েতিয়ার দরপত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বা শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হুট করে মারাফিয়ার ওই কাজগুলো অন্য প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার নানা রকম জটিলতা রয়েছে। প্রথমত, নতুন করে চুক্তি করে অন্য প্রতিষ্ঠানকে কাজে যুক্ত করতে সময় লাগবে। তা ছাড়া কুয়েতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই এখন নিজেদের চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রয়েছে। এর ফলে নতুন জনবল আর প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ফাঁদে পড়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচ্ছন্নতাকর্মীহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

কুয়েতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশের স্বতন্ত্র সাংসদ মোহাম্মদ সহিদ ইসলামের দেশটিতে কর্মী নিয়োগ ও পরিচ্ছন্নতা সেবার কাজে যুক্ততার কথা জানা ছিল শুরু থেকেই। তবে কুয়েতের গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, ব্যবসা পরিচালনার জন্য তিনি ‘জেনারেল ট্রেডিং অ্যান্ড কন্ট্রাকটিং লাইসেন্স’ নিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে শুধু সরকারি পরিচ্ছন্নতা সেবা নয়, নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সেবা, কৃষি খাত, পরিবহন ভাড়াসহ সরকারি নানা কাজের চুক্তির পাওয়ার একচ্ছত্র অধিকারী হয়েছিল সহিদের প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন চুক্তির নেপথ্যে থেকে কোনো রকম আইনি প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সহিদের বাংলাদেশ থেকে বিপুল কর্মী নেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত হয়। বহুমাত্রিক ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে তিনি মুদ্রা পাচার করতেন বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। কুয়েতে ব্যবসা পরিচালনার জন্য চারটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে লক্ষ্মীপুর থেকে নির্বাচিত বাংলাদেশের এই সাংসদের।