সরকারি ভবনের নির্মাণকাজ পেতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী, গণপূর্তের প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়েছেন যুবলীগের নেতা ও প্রভাবশালী ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম)। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব কথা বলেছেন বলে র্যাব জানিয়েছে।
এদিকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে তিন দিন ও অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধানসহ তাঁর দুই সহযোগীকে চার দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
গত ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে নিজ কার্যালয় থেকে বিদেশি মদসহ শামীমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। ২১ সেপ্টেম্বর তাঁকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন আদালত। গত বুধবার অস্ত্র মামলায় তাঁকে আবারও চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব-১। এ ছাড়া মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এই মামলা তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা র্যাব-১–এর পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং তাঁর কাছ থেকে লাভবান হওয়া অনেকের নাম পাওয়া গেছে। যাচাই–বাছাই শেষে নামগুলো প্রকাশ করা যাবে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে শামীম বলেন, টেন্ডারবাজি ও সরকারি বড় বড় ভবনের কাজ পেতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, গণপূর্তের প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উৎকোচ দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের পাঁচ তারকা হোটেলে বিনোদনের ব্যবস্থা করতেন শামীম। কাজ পেতে তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছেন।
শামীম যেসব প্রকল্পের কাজ করেছেন, সেগুলো হলো পোড়াবাড়িতে র্যাবের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবন, আগারগাঁওয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু) নতুন ভবন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিজ্ঞান জাদুঘর, সচিবালয়ের সম্প্রসারিত ভবন, বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির, হিলট্র্যাক্টস ভবন ও মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল। এ ছাড়া ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, কেবিনেট ভবন নির্মাণসহ বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা রিমান্ডে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় অনলাইনে ক্যাসিনো খেলার মূল হোতা সেলিম প্রধানসহ তাঁর দুই সহযোগীকে চার দিন রিমান্ডে নিয়েছে গুলশান থানার পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপর দুই সহযোগী হলেন আক্তারুজ্জামান ও রোকন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ নম্বর ফ্লাইটটি ছাড়ার আগমুহূর্তে সেখান থেকে নামিয়ে এনে সেলিম প্রধানকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনলাইনের ক্যাসিনোর সন্ধান পাওয়া যায়।
অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এবং অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগে গুলশান থানায় দুটি মামলা করে র্যাব। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশে অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসার মূল হোতা সেলিম প্রধান।
লোকমান রিমান্ডে
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে তৃতীয় দফায় আরও দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে তেজগাঁও থানার পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে পুলিশ আবার পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে।
আদালতে দেওয়া রিমান্ড প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, লোকমান রিমান্ডে থাকাকালে মামলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লোকমান জানিয়েছেন, তাঁর নিয়ন্ত্রণে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্যাসিনোতে অবৈধভাবে বিদেশি মদ, হুইস্কি ব্যবসা চলত। তাঁর নির্দেশে অবৈধ বিদেশি মদ, হুইস্কি শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি ও সরবরাহ করা হতো। এই ব্যবসার সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত আছে, তাঁদের বিষয়ে জানতে তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে তেজগাঁওয়ের মণিপুরি পাড়ার বাসা থেকে চার বোতল মদসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২। পরদিন তাঁর বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে লোকমান জানান, মোহামেডান ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেন তিনি। তাঁর এ টাকা অস্ট্রেলিয়ায় কমনওয়েলথ ও এএনজেড ব্যাংকে পাচার করেন। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাংকে তাঁর ৪১ কোটি টাকা রয়েছে। ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় পড়ার সুবাদে তিনি মাঝেমধ্যে সেখানে যেতেন।
আরও যাঁরা রিমান্ডে
অস্ত্র ও মাদক মামলায় ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে বহিষ্কার হওয়া খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া দ্বিতীয় দফায় ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম এবং রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ফু-ওয়াং ক্লাব থেকে গ্রেপ্তার তিন কর্মচারী ক্যাশিয়ার জাহিদুর রহমান মিয়া, কর্মচারী চঞ্চল পালমা ও জেভিআর জেরি ডিক আট দিন করে রিমান্ডে রয়েছেন।
উত্তরা থেকে ‘মাহজং’ উদ্ধার
রাজধানীর উত্তরায় এক চীনা নাগরিকের চালানো একটি হোটেল থেকে জুয়া খেলায় ব্যবহৃত দুটি ‘মাহজং’ উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
এই মেশিন দিয়ে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে কফি হাউস ও রেস্তোরাঁয় জুয়া খেলা হতো বলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে চীনা নাগরিক কেন্ট-এর মালিকানাধীন বাণিজ্যিক আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে ওই মেশিন জব্দ করা হয়। সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যে কেন্ট এগুলো সরিয়ে তাঁর হোটেলে রাখেন। এর আগে বনানীর একটি হোটেল থেকে আরেকটি ‘মাহজং’ উদ্ধার করা হয়।