‘সঠিক ময়নাতদন্ত’ চেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে দরখাস্ত দিয়েছেন হত্যা মামলার বাদী। প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আট মাস পেরোনোর পর বাদী এই আবেদন জানালেন। এই সময়ে মধ্যে একে একে ছাড়া পেয়ে গেছেন আট আসামির সাতজনই।
হত্যার শিকার নারীর নাম উম্মে কুলসুম। বাদী তাঁর বড় বোনের স্বামী সারওয়ার মো. কাওছার। কুলসুমের মৃত্যুর পর গত ২৬ জানুয়ারি তিনিই বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা করেছিলেন। এই মামলার এক নম্বর আসামি এমদাদ হোসেন ইমন একটি উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থার উপব্যবস্থাপক, বাকি আসামিরা তাঁর মা, ভাই ও বোনের স্বামী। হত্যাকাণ্ডের পরপরই সবাইকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এখন কারাগারে এমদাদ ছাড়া আর কেউ নেই। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বাদী সারওয়ার মো. কাওছার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার আসামিরা ছাড়া পাওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সিআইডি সেই কললিস্টও উদ্ধার করেছে। তাঁর দাবি, আসামিরা চান হত্যাটাকে আত্মহত্যা বলে চালাতে। তাঁরা (আসামি) তাঁদের পক্ষে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিতে যা করার তা-ই করছেন। সে আশঙ্কা থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন তিনি।
ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আসামিপক্ষের লোকজন যোগাযোগ করে থাকতে পারেন। এমন সবাই করে। তাঁরা ময়নাতদন্তে যা পাবেন, তা-ই দেবেন। কেন আট মাসেও উম্মে কুলসুম হত্যাকাণ্ডের ময়নাতদন্ত দেওয়া হলো না, জানতে চাইলে সোহেল মাহমুদ বলেন, বাদীপক্ষ অনুরোধ করেছেন একটি বোর্ড যেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনটা দেয়। করোনার কারণে বোর্ড বসতে পারেনি। প্রতিবেদনও দেওয়া হয়নি।
যদিও কুলসুমের মৃত্যু হয় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর অন্তত দুই মাস আগে।
সারওয়ার মো. কাওছার বলেন, মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টের একটি বাসায় স্বামী, শাশুড়ি ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে থাকতেন কুলসুম। গত ২৫ জানুয়ারি কুলসুমের দেবর ‘সুমন’ ফোন করে তাঁদের জানায়, কুলসুম খুন হয়েছেন। খবর পেয়ে তাঁরা কুলসুমের বাসায় গিয়ে দরজা বাইরে থেকে তালা মারা অবস্থায় পান। পরে বাড়িওয়ালার অতিরিক্ত চাবি দিয়ে থানা-পুলিশের উপস্থিতিতে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে কুলসুমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন। মৃতদেহের মাথার পেছনে, নাক-মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে জখমের চিহ্ন দেখতে পান তাঁরা।
সারওয়ার মো. কাওছার তাঁর শ্যালিকা কুলসুমের আঘাতে ভরা মৃতদেহের কিছু ছবিও নিজের কাছে রেখেছেন।
সারওয়ার মো. কাওছার আরও জানান, বছর পাঁচেক আগে পারিবারিক সম্মতিতে উম্মে কুলসুমের সঙ্গে এমদাদ হোসেনের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর থেকেই নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিলেন তিনি। তিন বছরের ছেলে ঈশানের কথা চিন্তা করে মুখ বুঁজে সহ্য করে আসছিলেন। ২০১৭ সালে একবার প্রচণ্ড মারধরের শিকার হলে সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন স্বজনেরা। পরে নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে কুলসুম সংসারে ফিরে যান। মৃত্যুর দিন তিনেক আগে আবারও প্রচণ্ড মারধরের শিকার হন কুলসুম।
পরিবারের লোকজন ১০৯-এ ফোন করে সে সময় সাহায্য চেয়েছিলেন। পুলিশ এমদাদ হোসেনকে গ্রেপ্তারও করেছিল। পরে থানায় এসে আর কখনো নির্যাতন করবেন না বলে মুচলেকা দেন। হত্যা মামলার আসামিরা সে সময় উপস্থিত ছিলেন থানায়। কুলসুম আবারও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের প্রতিশ্রুতি পেয়ে বাসায় ফিরে যান। এর পরের দুদিন পরিবারের লোকজন যখনই ফোন করেছেন, তখনই কুলসুমের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁদের জানিয়েছেন, তিনি (কুলসুম) তাঁর ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত। কখনো বলেছেন কুলসুম ছেলেকে খাওয়াচ্ছেন, কখনো বলেছেন ঘুম পাড়াচ্ছেন। কুলসুমের পরিবারের কেউ জানতেও পারেননি তিনি মারা গেছেন।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মো. ইব্রাহীম বলেন, কুলসুম খুন হয়েছেন কি না, সেটি এখন তদন্ত হচ্ছে। আসামিপক্ষ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না, এটা তাঁর মামলার বিষয় নয়। এটা অপ্রাসঙ্গিক।