শ্রীলঙ্কায় মাদক চোরাচালানে নাম এল তিন বাংলাদেশির

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি
>

• কলম্বোয় গত ডিসেম্বরে দুটি পৃথক অভিযান
• ৩০৪ কেজি হেরোইন ও ৫ কেজি কোকেন জব্দ
• ৩ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার, তাঁদের একজন নারী

শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক ইতিহাসে মাদকের সবচেয়ে বড় চালানসহ ধরা পড়েছেন দুই বাংলাদেশি। তাঁদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে ২৭২ কেজি হেরোইন ও ৫ কেজি কোকেন। গত ৩১ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর উপকণ্ঠ মাউন্ট লাভিয়ানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জব্দ করা মাদকের দাম প্রায় ১৫২ কোটি টাকা।

ধরা পড়া দুই বাংলাদেশি হলেন বগুড়ার মোহাম্মদ জামালউদ্দিন ও জয়পুরহাটের দেওয়ান রফিউল ইসলাম। গত বছর বড়দিন (২৫ ডিসেম্বর) সামনে রেখে শ্রীলঙ্কার পুলিশের মাদক বিভাগ ও স্পেশাল টাস্কফোর্স ওই বিশেষ অভিযান চালায়।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর কলম্বোর উপকণ্ঠের একই এলাকা থেকে ৩২ কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করা হয় বাংলাদেশি এক নারীকে, নাম সূর্যমণি। তিনি গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে মালয়েশিয়া থেকে কলম্বো পৌঁছান বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

২০১৩ সালে একটি বিশেষ অভিযানে শ্রীলঙ্কায় একসঙ্গে আটক হয়েছিল ২৬১ কেজি মাদক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এই তথ্য দিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাত্র এক মাসের মধ্যে ৩০৪ কেজি হেরোইন, ৫ কেজি কোকেনসহ তিন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের ঘটনা শ্রীলঙ্কায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ আভাস দিয়েছে। বিপুল পরিমাণ মাদক চোরাচালানের বিষয়ে বিশেষায়িত তথ্য বিনিময় ও তদন্তে সহযোগিতার জন্য শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের দপ্তর, দেশটির পুলিশের মহাপরিদর্শক ও পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের প্রধান কলম্বোয় বাংলাদেশের হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

কলম্বোর একটি দোতলা বাড়ির ফ্ল্যাটে হেরোইনের প্যাকেট। ছবি: সংগৃহীত

জানতে চাইলে শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মাদক চোরাচালানের তদন্তের বিষয়ে দেশটির সরকার বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে। বাংলাদেশ সব সময় সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্সের’ (শূন্য সহিষ্ণুতা) নীতি অনুসরণ করে আসছে। মাদক চোরাচালানের তদন্তে শ্রীলঙ্কাকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ।

হাইকমিশনার জানান, মাদক চোরাচালানের বিষয়ে কীভাবে দুই পক্ষ একে অন্যকে সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষের একটি বৈঠকের কথা রয়েছে।

এদিকে শ্রীলঙ্কা পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারাকে উদ্ধৃত করে গতকাল দেশটির প্রথম সারির গণমাধ্যম ডেইলি মিরর জানিয়েছে, মাউন্ট লাভিয়ানার টেম্পলার্স রোডের একটি আবাসিক এলাকা থেকে প্রথমে ৯ কেজি হেরোইনসহ দুই বাংলাদেশি জামাল ও রফিউলকে আটক করা হয়। কেকের বাক্সে বিশেষ কায়দায় রাখা ওই হেরোইন জব্দের সময় দুই বাংলাদেশির একজনের কাছে স্বয়ংক্রিয় চাবি (ফ্ল্যাটের দরজা খোলার জন্য) পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদের পর দুজনকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় একটি দোতলা বাড়িতে যান। বাড়িতে ঢুকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ আটকে যায়। তাঁরা দেখতে পান, ঘরজুড়ে রয়েছে হেরোইন–ভর্তি প্যাকেট। পরে সেখান থেকে ২৬৩ কেজি হেরোইন, ৫ কেজি কোকেনসহ সব মিলিয়ে ২৬৮ কেজি মাদক উদ্ধার করা হয়। শ্রীলঙ্কার মুদ্রায় উদ্ধারকৃত মাদকের দাম ৩৩৩ কোটি রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫২ কোটি টাকা।

শ্রীলঙ্কার পুলিশ ও বিশেষ টাস্কফোর্সের সদস্যদের ধারণা, মাদক হাতবদলের জন্য ওই বাড়িকে নিরাপদে ব্যবহার করে আসছিল পাচারকারীরা। কলম্বোর বাড়িটি থেকে সারা দেশে মাদকের চালান পৌঁছে দেওয়া হতো।