সিলেটের হজরত শাহজালালের (রহ.) দরগাতে হামলা পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচ তরুণকে আটক করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) একটি দল। আটক পাঁচজনের মধ্যে দুজন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
আজ মঙ্গলবার সকালে আটক পাঁচজনকে ঢাকায় নেওয়া হয়। এর আগে গত রোববার মধ্যরাত থেকে সিলেটের তিনটি স্থানে একযোগে অভিযান চালায় সিটিটিসির দলটি। টানা তিন দিনের অভিযানে সহযোগিতা করে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)।
যোগাযোগ করলে এসএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার অভিযানের খবরের সত্যতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই বলে তিনি জানান।
অভিযানসংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, গত রোববার রাতে অভিযানের প্রথম ধাপে নগরের মিরাবাজারের উদ্দীপন ৫১ নম্বর বাসা থেকে নাইমুজ্জামান ওরফে নাইমকে আটক করা হয়। নাইম নব্য জেএমবির ‘সিলেট আঞ্চলিক কমান্ডার’ পদধারী। তাঁকে আটক করার পর তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও চারজনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন অভিযান পরিচালনাকারীরা। গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার ভোরে আরও দুটি অভিযানে নগরের জালালাবাদ আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে সানাউল ইসলাম ওরফে সাদী ও টুকেরবাজার থেকে আরও দুজনকে আটক করা হয়।
আটক পাঁচজনের মধ্যে নাইমুজ্জামান ও সানাউল ইসলাম ওরফে সাদী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাকি তিনজনের মধ্যে দুজন একটি কলেজের ছাত্র। নগরের মিরাবাজার, জালালাবাদ আবাসিক এলাকা ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা টুকেরবাজারে পৃথক পৃথক তিনটি অভিযানে পাঁচজনকে আটক করা হয়। আজ সকালে পাঁচজনকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।
সিটিটিসির একটি সূত্র জানায়, গত ঈদুল আজহাকে ঘিরে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের কথিত ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণায় পুলিশ দেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করেছিল। তখন সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধে ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করে পুলিশ। এরপর সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ এলাকায় হামলার আশঙ্কা থাকায় গত ৩১ জুলাই মধ্যরাতে সেখানে সিটিটিসির একটি বিশেষ অভিযান হয়। এই অভিযানের প্রায় এক সপ্তাহ পর নগরের তিনটি এলাকা ঘিরে টানা তিন দিনের ওই অভিযান শেষে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
অভিযানে সিলেটে অবস্থান করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ এলাকায় হামলার পরিকল্পনা ছিল। এ পরিকল্পনার সবকিছু সম্পর্কে জানা গেছে। আটক পাঁচজনের মধ্যে শীর্ষ জঙ্গি দুজন। তাদের কাছ থেকে দরগাহে হামলার পরিকল্পনার বিষয়টি জানা গেছে।
পাঁচজনকে আটকের মধ্য দিয়ে হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহসহ সিলেটে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়েছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরি করে বিস্ফোরণ ঘটানোর সক্ষমতা সম্পর্কে আটক পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তাঁদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। মিরাবাজার ও জালালাবাদ আবাসিক এলাকায় খোঁজ নিলে কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, নাইমুজ্জামান ও সানাউল চুপচাপ স্বভাবের বলে তাঁরা চিনতেন। কোনো সামাজিক আয়োজন বা রাজনীতিতে তাঁদের সক্রিয়তা দেখা যায়নি।