লংগদুর হামলা রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে

রাঙামাটির লংগদুতে পাহাড়িদের বসতবাড়িতে হামলার প্রতিবাদে নাগরিক সমাজের সমাবেশ। ছবি: সাজিদ হোসেন।
রাঙামাটির লংগদুতে পাহাড়িদের বসতবাড়িতে হামলার প্রতিবাদে নাগরিক সমাজের সমাবেশ। ছবি: সাজিদ হোসেন।

রাঙামাটির লংগদুতে পাহাড়িদের বসতবাড়িতে হামলা রাষ্ট্র্রীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা এ হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন । প্রতিবাদ সমাবেশে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ হিসেবে ঘর তৈরি করে দেওয়ার পাশাপাশি সেটেলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে পুনর্বাসন করার দাবিও করেছেন।

আজ রোববার বেলা ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়। রাঙামাটির লংগদুতে পাহাড়ি গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে নাগরিক সমাজ।
গত শুক্রবার ইউনিয়ন যুবলীগের এক নেতার মৃত্যুর ঘটনায় রাঙামাটির দুর্গম লংগদু উপজেলা সদরের চারটি গ্রামে পাহাড়িদের অন্তত ২০০ বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা এ ঘটনায় বাঙালিদের দায়ী করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে স্থানীয় প্রশাসন উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। গতকাল শনিবার তা প্রত্যাহার করা হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে সংহতি জানান লেখক, কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, হাজার হাজার পাহাড়ি জনগণ জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। এ অবস্থায় মানুষ বাস করতে পারে না। রামুতে যেভাবে প্রশাসন বাড়িঘর নির্মাণ করে দিয়েছে, লংগদুতেও তেমনি ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি তৈরি করে দিতে হবে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘সেখানে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে আমরা তার বিচার চাই, কিন্তু যে হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে এই তাণ্ডব করা হলো, তাতে এই রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এই অনাচারের আমরা অবসান চাই।’ তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়েছেন।
সমাবেশে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন একটি ধারণাপত্র পাঠ করেন। তিনি বলেন, রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা ও পার্শ্ববর্তী মানিকজোড়ছড়া ও বাত্যাপাড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে সেটেলার বাঙালিরা পাহাড়িদের অগ্নিসংযোগসহ সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়।

লংগদুর হামলার প্রতিবাদে আজকের সমাবেশে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ। ছবি: সাজিদ হোসেন

দুই ঘণ্টাব্যাপী এই প্রতিবাদ সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নাট্যব্যক্তিত্ব, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সংহতি জানান। বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা সমাবেশে ‘অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার কর’, ‘আদিবাসী নারীদের ওপর সহিংসতা বন্ধ কর’, ‘আমাদের ভূমি আমাদের জীবন’ লেখা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে প্রতিবাদ জানান। তাঁরা বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দিয়ে এই হামলা ও অগ্নিসংযোগকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, দেশে অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। কোনো সভ্য দেশে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটতে পারে? আইনের লোকেরা কোথায় ছিল? দুঃখের বিষয়, এই রাষ্ট্রকে কিছুতেই মানবিক করা যাচ্ছে না।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মানবাধিকারকর্মী নুমান আহম্মেদ খান বলেন, বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি দূর করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
রাঙামাটি থেকে নির্বাচিত সাংসদ উষাতন তালুকদার বলেন, ‘লংগদুর মানুষকে যে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে তা কখনো আশা করিনি। সরকারের সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতিতে সেখানে এতগুলো বাড়িতে কীভাবে আগুন জ্বালানো হলো? উদ্দেশ্যমূলক ও পরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়েছে।’
দেশের সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে বারবার ব্যর্থ বলে উল্লেখ করেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, ন্যায্যতা ও শান্তি কমিশনের থিওফিল নকরেক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে টিএসসি গিয়ে শেষ হয়।