বাংলাদেশি পরিচয়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নিতে সহায়তা করছে একটি চক্র। চক্রটি যাবতীয় কাজ করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। চক্রের দুই সদসে৵র নামও বেরিয়ে এসেছে। পুলিশ তাঁদের হনে৵ হয়ে খুঁজছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ তিন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এ তথ্য জানতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরের আকবর শাহ থানার সিডিএ এলাকা থেকে মো. মুছা, মো. ইউসুফ ও মো. আজিজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে নোয়াখালী পাসপোর্ট অফিস থেকে করা বাংলাদেশি তিনটি পাসপোর্ট ও মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। ওই পাসপোর্ট নিয়ে তুরস্ক যাওয়ার জন্য তাঁরা ঢাকায় যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ ঘটনায় আকবর শাহ থানা–পুলিশ মামলা করেছে। গতকাল বিকেলে গ্রেপ্তার তিনজনকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
তিন রোহিঙ্গাকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, মিয়ানমার থেকে পরিবার নিয়ে ২০১৭ সালে তাঁরা বাংলাদেশে আসেন। এরপর উখিয়ার হাকিমপাড়া এলাকার ক্যাম্পে ছিলেন। সেখান থেকে চট্টগ্রামে আসেন। নোয়াখালীর সেনবাগের বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র নেন। এগুলো দিয়ে পরে নেন পাসপোর্ট। তাঁদের যাবতীয় কাজ করে দেন ক্যাম্পে থাকা নুরুল আলম নামের এক দালাল। তাঁকে যাবতীয় নির্দেশনা দিতেন মো. সাইদ ও শওকত আলী নামের দুই রোহিঙ্গা। তাঁদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যাবতীয় কথা বলতেন। যাতে কখনো ধরা পড়ে না যান। একেকটি পাসপোর্টের জন্য ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দেন দালালদের। সেই টাকা থেকে পাসপোর্ট–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র কীভাবে পেয়েছেন তিন রোহিঙ্গা, তা তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সনদগুলোতে যে নাম–ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, তা ভুয়া।
আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট তৈরিসহ অবৈধ কাজগুলোতে তাঁদের নেতাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। যাতে সহজে ধরা না পড়েন। পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে জড়িত রোহিঙ্গাদের নেতাদের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। গ্রেপ্তার তিনজনের কাছ থেকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে। তিন রোহিঙ্গাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা কার্যালয়ের পরিচালক আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে পাসপোর্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সতর্ক আছেন। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। যাচাই–বাছাই করে যাতে কাউকে সনদ দেওয়া হয়। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের ভাষাগত ও আচার–আচরণের সঙ্গে মিল থাকায় সহজে ধরা যায় না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির দালালের মাধ্যমে কখনো ভুয়া আবার কখনো প্রকৃত সনদ নিয়ে পাসপোর্ট করতে আসছে।
একটু সন্দেহ হলেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হচ্ছেন। আবার কখনো পুলিশ কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে তদন্ত করতে পাঠাচ্ছেন। ইতিমধে৵ তিন রোহিঙ্গাসহ চারজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।
দেশের বৃহত্তর স্বার্থে রোহিঙ্গারা যাতে পাসপোর্ট না পায়, সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান আবু সাইদ। যাতে একজন রোহিঙ্গাও এ দেশের নাগরিক পরিচয় দিতে না পারে। পাসপোর্ট কার্যালয়ের কেউ জড়িত থাকলে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই।