শিশুটির কোমরে ছিল রুপার বিছা। আর গলায় রুপার চেইন। বিছা ও চেইনের জন্য এক বছর সাত মাস বয়সী শিশুটিকে অপহরণ করে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। তাঁকে হত্যার কথা স্বীকার করে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন শিশুটির চাচি।
ওই নারীর নাম পারভীন বেগম (৩৫)। তাঁর স্বামী আফজাল হোসেন। বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার চকশিমুলিয়া গ্রামে। নিহত ওই শিশুর নাম আজমাইন সারোয়ার ওরফে আলিফ। সে একই গ্রামের মো. তারেকের ছেলে।
পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, পারভীন বেগম তারেকের ভাইয়ের স্ত্রী। ৮ আগস্ট দুপুরে তারেকের বাড়িতে এসে আজমাইন সারোয়ারকে কোলে নিয়ে পারভীন বেগম নিজ বাড়িতে যান। এরপর থেকে শিশুটিকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। জানতে চাইলে তিনি শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। পরের দিন শিশুটির মা চাম্পা বেগম বাদী হয়ে চারঘাট থানায় পারভীনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, পূর্বশত্রুতার জেরে পারভীন তাঁর ছেলেকে অপহরণ করে হত্যা করেছেন। সেদিনই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চারঘাট থানার কালুহাটি পূর্বপাড়া গ্রামসংলগ্ন বড়াল নদে ভাসমান অবস্থায় শিশু আজমাইনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে কোনো আঘাতের ছিল না। তবে তার সঙ্গে থাকা রুপার চেইন ও কোমরে বিছা পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় আসামি পারভীন বেগমকে আদালতের নির্দেশে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমিত কুমার কুণ্ডু জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি পারভীন স্বীকার করেন, ঘটনার আগের দিন আজাদ হোসেন (৩৭) নামের একজনের সঙ্গে শিশুটিকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করেন। আজাদের বাড়ি একই গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আ. সাত্তার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, শনিবার দুপুরে শিশু আজমাইন সারোয়ারকে নিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তা ওপরে দাঁড়ানো আজাদের কাছে দেন। আজাদ শিশুটিকে বড়াল নদে ফেলে দিয়ে আসেন এবং কোমরের বিছা ও গলার চেইন এনে পারভীনকে দেন। এর বিনিময়ে আজাদ পান ৩০০ টাকা। এ টাকা নিয়ে আজাদ চলে যান। ওসি আরও জানান, স্বীকারোক্তির পরে আসামি পারভীন নিজ হাতে তাঁর বাড়ির আঙিনার লিচুগাছের নিচে আবর্জনার স্তূপের ভেতর থেকে মাটি খুঁড়ে বিছা ও চেইন বের করে দেন। গত বুধবার তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আসামি আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। তবে এদিন রিমান্ড শুনানি হয়নি।