চুক্তি ভঙ্গ করে করোনা রোগীদের থেকে বিল আদায়, ভুয়া প্রতিবেদন তৈরিসহ নানা অভিযোগে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালাচ্ছে র্যাব। সেখান থেকে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপকসহ আটজনকে আটক করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. শাহেদ পলাতক।
আজ সোমবার দুপুরের পর থেকে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কের ওই হাসপাতালে অভিযান শুরু করে র্যাব। এতে নেতৃত্ব দেন র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম। সন্ধ্যার পর তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত আটটা) অভিযান চলমান।
র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলমের ব্রিফিং থেকে জানা যায়, রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিন ধরনের অভিযোগ ও অপরাধের প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা। প্রথমত, তারা করোনার নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করত। এ ধরনের ১৪টি অভিযোগ র্যাবের কাছে জমা পড়ে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান।
দ্বিতীয়ত, হাসপাতালটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার। সরকার এই ব্যয় বহন করবে। কিন্তু তারা রোগীপ্রতি লক্ষাধিক টাকা বিল আদায় করেছে (এ সময় সারোয়ার আলম গণমাধ্যমকর্মীদের বিলের নথি দেখান)। পাশাপাশি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে এই মর্মে সরকারের কাছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি বিল জমা দেয়। সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল এ পর্যন্ত শ দুয়েক কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে।
সারোয়ার আলমের ব্রিফিং থেকে জানা যায়, রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তৃতীয় অপরাধ হলো, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের তারা কোভিড পরীক্ষা করবে বিনা মূল্যে। কিন্তু তারা আইইডিসিআর, আইটিএইচ ও নিপসম থেকে ৪ হাজার ২০০ রোগীর বিনা মূল্যে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে এনেছে। পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষা না করেই আরও তিন গুণ লোকের ভুয়া করোনা রিপোর্ট তৈরি করে।
সারোয়ার আলম আরও জানান, অভিযানে দেখা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স ২০১৪ সালে শেষ হয়ে যায়। এরপর আর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। কীভাবে সরকার এমন একটি হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা চুক্তিতে গেল, তা খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে র্যাবের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সরেজমিনে ঔষধ প্রশাসনের পরিচয়সংবলিত লোকজনকে দেখা গেছে।
সারোয়ার আলম আরও বলেন, র্যাব এমন একটি অভিযান চালাবে তা টের পেয়েছেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. শাহেদ। অন্য কেউ তাঁর নামে এমন অপকর্ম করছেন, এমন মর্মে শাহেদ দিন দুয়েক আগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সারোয়ার আলমের ভাষ্য, মূলত নিজের অপরাধ ঢাকতে শাহেদ জিডির আশ্রয় নিয়েছেন।