রিং আইডির তিন ব্যাংক হিসাবের ১৫০ কোটি টাকা জব্দ

রিং আইডি
রিং আইডি

প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এমএলএম প্রতিষ্ঠান রিং আইডির তিনটি ব্যাংক হিসাবের ১৫০ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল রোববার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে রিং আইডির পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম গত তিন মাসে বিভিন্ন ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানের
‘সিলভার’ ও ‘গোল্ড’ ক্যাটাগরিতে সদস্যপদ দিয়ে ২১৩ কোটি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি ‘রিং পে’ নামের একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করতে যাচ্ছিল। সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক বছরের অনুমতিও নিয়েছিল তারা।

গ্রাহকদের করা প্রতারণার দুটি মামলার প্রাথমিক তদন্ত করে গত শুক্রবার গুলশান এলাকা থেকে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল ছিল রিমান্ডের প্রথম দিন।

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিং আইডির তিনটি ব্যাংক হিসাবে ১৫০ কোটি টাকা ছিল। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। তারা ওই অর্থসহ অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করেছে।

রেজাউল মাসুদ জানান, রিং আইডির মালিক ও অন্যান্য পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবার কতটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে, সে তথ্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব থেকে কারও ব্যক্তিগত হিসাবে টাকা সরানো হয়েছে কি না, তা–ও বের করার চেষ্টা চলছে।

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্যমতে, গত বছরের আগস্ট থেকে রিং আইডি অনলাইনে আয়ের কথা বলে ১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক তৈরি করেছে। নানা লোভ দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিয়েছে। তবে ঠিক কত টাকা নিয়েছে, তা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

সিআইডি জানায়, সারা দেশে রিং আইডির এক হাজার এজেন্ট রয়েছে। তাঁদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সাইফুলকে গ্রেপ্তারের পর দেশের বিভিন্ন এলাকাসহ বিদেশ থেকেও শতাধিক ভুক্তভোগী সিআইডির সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের প্রতারিত হওয়ার কথা বলেছেন। সিআইডির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একজন ভুক্তভোগীকে পেয়েছি, তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মিলে প্রায় ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।’

আরও দুই প্রতিষ্ঠানের তিনজন গ্রেপ্তার

গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে গতকাল রাজধানী থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এসপিসি ওয়ার্ল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং নিরাপদ শপের পরিচালককে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এ বিষয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানোর কথা।

এক মাসেও সোহেল রানাকে দেশে ফেরানো যায়নি

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের কেলেঙ্কারির হোতা বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা গত ৩ সেপ্টেম্বর ভারতে গ্রেপ্তার হন। এখনো তাঁকে দেশে ফেরাতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি শাখা ভারতের এনসিবির সঙ্গে তিন দফা যোগাযোগ করেছে। কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেয়নি। পরে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছি।’

কম দামে পণ্য দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ই-অরেঞ্জ। এ ঘটনায় গুলশান থানায় হওয়া প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন মালিক দম্পতি সোনিয়া মেহজাবিন ও মাসুকুর রহমান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমানউল্লাহ।

এদিকে গতকাল ঢাকার আদালতে সোনিয়া মেহজাবিন ও মাসুকুর রহমানসহ এ প্রতিষ্ঠানের সাতজনের বিরুদ্ধে সাড়ে ৯ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়েছে। ২৭ জন ভুক্তভোগীর পক্ষে মামলার আবেদন করেন মো. নাসিম প্রধান নামের এক ব্যক্তি। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বিভিন্ন পণ্য কেনার জন্য তাঁদের কাছ থেকে মোট ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৫১ হাজার ৭৯ টাকা নিয়েছেন আসামিরা। তাঁরা টাকা পাওয়ার পর রসিদও দিয়েছেন। কিন্তু পণ্য সরবরাহ করেননি।

আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে নথি পর্যালোচনার পর গুলশান থানাকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

ইভ্যালির রাসেল–শামীমার মুক্তি দাবি

ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল, তাঁর স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের মুক্তির দাবিসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন কিছু ব্যক্তি। ইভ্যালির পণ্য সরবরাহকারী (মার্চেন্ট) ও ভোক্তা পরিচয় দিয়ে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁরা।