সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় রায় আজ সোমবার ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার বিকেলে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় দেন। রায়ে সন্তুষ্ট নন সরকারি কৌঁসুলি। মামলার বাদীও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। আসামির আইনজীবী বলছেন, তাঁরা ন্যায়বিচার পাননি। উচ্চ আদালতে যাবেন।
বেলা দুইটার দিকে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। বেলা ২টা ১৬ মিনিটে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল রায় পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি পুরো মামলায় আসামি বাদী ও সাক্ষীদের বক্তব্য উঠে আসা ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। আসামি প্রদীপ, লিয়াকতসহ সাজাপ্রাপ্ত আসামি কার কী অপরাধ বিস্তারিত তুলে ধরেন।
বেলা সাড়ে চারটার দিকে রায় ঘোষণা করেন বিচারক। রায়ের আদেশে কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও টেকনাফের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, এপিবিএনের কনস্টেবল সাগর দেব রুবেল শর্মা, মারিশবুনিয়া গ্রামের তিন ব্যক্তি নেজাম উদ্দিন, নুরুল আমিন ও মো. আইয়াজ উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।
বেকসুর খালাস পান বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের এএসআই মো. লিটন মিয়া, টেকনাফ থানার কনস্টেবল ছাফানুল করিম, মো. কামাল হোসাইন আজাদ, মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান আলী, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও কনস্টেবল মো. রাজীব হোসেন।
রায়ের আদেশে সন্তুষ্ট নন সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম। রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ৩১ কার্য দিবসে ৬৫ জনের সাক্ষ্য নিয়েছি। এতে উঠে আসে ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে আসামিরা সিনহাকে হত্যা করেন। আমরা আশা করেছিলাম আজকে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। আপিল করা হবে কি না, প্রশ্নের জবাবে সরকারি কৌঁসুলি বলেন, আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব।’
মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, মামলার রায় তিনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
আসামি লিয়াকত আলীর আইনজীবী চন্দন দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব। একই বক্তব্য অন্য আসামির আইনজীবীরও।’
সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণে উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। প্রদীপসহ আসামিদের প্রিজন ভ্যানের নিয়ে যাওয়ার সময় উৎসুক জনতা চিৎকার করতে থাকেন। অপর দিকে আসামিদের নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের স্বজনেরা আদালত প্রাঙ্গণে কান্নায় ভেঙে পড়েন।