রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাঁর এক সহকর্মীকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কৃষি অনুষদ ভবনের দোতলায় এই ঘটনা ঘটে। এতে ধাক্কা খেয়ে ওই শিক্ষক অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁর সহকর্মীরা অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেন।
অভিযোগকারী শিক্ষকের নাম মু. আলী আসগর। তিনি একই বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর অভিযোগ, সহকর্মী অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে তিনি মেঝেতে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম দাবি করেছেন, ‘মিডিয়া কাভারেজ পাওয়ার জন্য অধ্যাপক আলী আসগর এমন অভিযোগ তুলেছেন। আমি তাঁর গায়ে হাতও দিইনি। এটি আসলে তাঁর অভিনয়।’
অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আলী আসগর বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বিপক্ষে ছিলেন। গতকাল নতুন শিক্ষকের গোপনীয় তথ্য হিসাব দপ্তরে পাঠানোর কথা ছিল। যেগুলো ছিল মোতালেব নামে বিভাগের এক পিয়নের কাছে। অধ্যাপক আলী আসগর ওই পিয়নের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে কাগজপত্রগুলো “হাইজ্যাক” করে ফটোকপি করছিলেন। এই খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। আমাকে দেখে আলী আসগর ধরা পড়ে যান। তিনি হঠাৎ নিজে থেকে পড়ে যান। এতে আমিও হকচকিয়ে যাই।’
চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলী আসগর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খাইরুল ইসলাম আগেও আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ডিন অফিস কক্ষের এক পাশে কাগজপত্র ফটোকপির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানে হঠাৎ অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম এসে উপস্থিত হন। তিনি কোনো কথা না বলেই আমাকে ধাক্কা মারেন।’
জানা যায়, গত নভেম্বর মাসে অধ্যাপক আলী আসগর ও অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে একে অপরের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর আগে অধ্যাপক আলী আসগর ক্রপ সায়েন্স বিভাগে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আদালতে রিট করেন। গত ২৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে তিনজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়।
কৃষি অনুষদের দোতলার ২১৮ নম্বর কক্ষে অনুষদের কার্যালয়। কক্ষে কয়েকটি ডেস্ক আছে। সেগুলো উঁচু বোর্ড দিয়ে তিন পাশে ঘেরা। কক্ষের এক পাশে আছে একটি ফটোকপি মেশিন। ঘটনার সময় কার্যালয়ে ছিলেন অনুষদের হিসাব উপপরিচালক মো. আজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক আলী আসগর কীভাবে পড়লেন, তা দেখিনি। একটা শব্দ শুনে সেখানে গিয়ে দেখি, তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। তখন সেখানে অধ্যাপক খাইরুল ইসলামও ছিলেন।’ আর কার্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার সোহেল রানা বলেন, ‘অফিসে সবার ডেস্ক উঁচু বোর্ড দিয়ে ঘেরা, তাই পাশের কিছু দেখা যায় না। ওই দুই শিক্ষকের মধ্যে কোনো কথা বলতে শুনিনি। তবে পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনেছি।’
এ বিষয়ে বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ওই সময় বিভাগে ছিলাম না। জ্ঞান হারানোর খবর শুনেই অ্যাম্বুলেন্সের খবর দেওয়া হয়। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর অধ্যাপক আলী আসগরের জ্ঞান ফিরলে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান বলেন, দুই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে সরেজমিনে খোঁজ নেওয়া হবে।