রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ক্যাম্পাসে একটি টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ক্যাম্পাসের একটি ভবনের ১১১৯ নম্বরের ওই কক্ষ থেকে লোহার রড, পাত ও পাইপ উদ্ধার করে পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর গতকাল রোববার এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (পিআইডব্লিউ) এসএম ফেরদৌস আলমকে। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কারিকুলাম) মো. নূরুল ইসলামকে সদস্য ও রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওমর ফারুককে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
ফেরদৌস আলম বলেন, গতকাল রোববার বিকেলে তিনিসহ কমিটির সদস্যরা রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় অধ্যক্ষ-শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুরটি দেখেন। পরে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১১১৯ নম্বর কক্ষে যান। ফেরদৌস আলম বলেন, ‘ওই কক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মারধর করত বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। সেই কক্ষ জোর করে দখলে নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন সময় আড্ডা দিত। ওই কক্ষ থেকে ধারালো কিছু অস্ত্র পাওয়া যায়।’ তিনি বলেন, ‘পুকুরের গভীরতা অনেক বেশি ছিল। ওই অধ্যক্ষ সাঁতার না জানলে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’
এদিকে এ ঘটনায় গতকাল রাতে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নগরীর চন্দ্রিমা থানার ওসি শেখ গোলাম মোস্তফা জানান। তাঁরা হলেন মেহেদী হাসান আশিক, মেহেদী হাসান হিরা, নবিউল উৎস ও নজরুল ইসলাম। এ নিয়ে এ মামলায় নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। তাঁদের সবাইকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ওসি শেখ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গত শনিবার রাতে এ ঘটনায় ২৫ জনকে আটক করা হয়। পরে সেখান থেকে সিসি টিভি ফুটেজ দেখে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রোববার রাতে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’ তবে মূল আসামি পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি এখনো পুলিশ। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, দুপুরে নামাজ পড়ে অফিসে যাচ্ছিলেন তিনি। ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনসহ কয়েকজন তাঁর পথ আটকান। ‘কথা আছে’ বলে তাঁকে পুকুরের ধারে নিয়ে যেতে চান। যেতে রাজি না হলে তাঁরা জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে পুকুরে ফেলে দেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের মুখ বাঁধা ছিল।
ঘটনাস্থলে থাকা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অন্তত ১০ জন তরুণ অধ্যক্ষকে দ্রুতগতিতে পুকুরের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ হাত ধরে টানছিলেন। আবার কেউ ধাক্কা দিচ্ছিলেন। মুহূর্তের মধ্যেই অধ্যক্ষকে পুকুরে নিক্ষেপ করে তাঁরা পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় ওই রাতেই ফরিদ উদ্দীন নগরের চন্দ্রিমা থানায় মামলা করেছেন। এতে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
কামাল হোসেন সৌরভকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার
অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী কামাল হোসেন সৌরভকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি রকি কুমার ঘোষ বলেন, গতকাল রাতে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সৌরভকে বহিষ্কার ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবং রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ নভেম্বর রাজশাহী পলিটেকনিকের অধ্যক্ষের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনার দায়ে ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কামাল হোসেন সৌরভকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো। সেই সঙ্গে পলিটেকনিক শাখার সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।