অপারেশন 'সান ডেভিলে' নিহত ৬

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার হাবাসপুরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার হাবাসপুরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার হাবাসপুরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে পরিচালিত পুলিশের অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সান ডেভিল’। এই অভিযানে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন জঙ্গি এবং একজন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য। আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুই শিশুকে। নিহত সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত একটা থেকে এই অভিযান শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার সারা দিন অভিযান চালানোর পর রাত আটটার দিকে অভিযানটি স্থগিত ঘোষণা করেন রাজশাহীর অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মাসুদুর রহমান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগামীকাল শুক্রবার সকাল থেকে আবার অভিযান শুরু হবে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঢাকা থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। কাল তারা আস্তানার ভেতরে কাজ শুরু করবে।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিবজুর আলম মুন্সি প্রথম আলোকে বলেন, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে মাঠের মধ্যে থাকা বাড়িটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ওই বাড়ির ভেতর থেকে কয়েকজন বের হয়ে এসে ‘আত্মঘাতী বিস্ফোরণ’ ঘটান।

>

* আস্তানা থেকে বেরিয়ে হঠাৎ জঙ্গিদের হামলা

* নিহতদের মধ্যে পাঁচজন জঙ্গি, একজন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য
* পাঁচ জঙ্গির চারজন পুরুষ ও একজন নারী: পুলিশ
* এক নারীর আত্মসমর্পণ, উদ্ধার ২ শিশু
* সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঢাকা থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়
* ফায়ার সার্ভিসের সদস্য নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

গোদাগাড়ী সার্কেলের সিনিয়র এএসপি একরামুল হক বলেন, জঙ্গিদের ‘আত্মঘাতী বিস্ফোরণের’ সময় একজন নারী ও পুরুষ দৌড়ে গিয়ে কাছে থাকা ফায়ার সার্ভিসের একজন সদস্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ারম্যান আবদুল মতিন। আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হন ওই আস্তানার পাঁচজন।

এই পাঁচজন হলেন সাজ্জাদ আলী (৫০), তাঁর স্ত্রী বেলি বেগম (৪৫), ছেলে আলামিন (২৫), মেয়ে কারিমা খাতুন (১৭) এবং বহিরাগত যুবক আশরাফুল। সাজ্জাদ ও বেলি ফায়ার সার্ভিসের সদস্য মতিনকে কুপিয়ে জখম করেন। আরেক মেয়ে সুমাইয়া তিন ঘণ্টা বসে থাকার পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। সুমাইয়ার দুই সন্তান জুবায়ের (৭) ও দেড় মাস বয়সী আফিয়াকে পুলিশ ওই আস্তানা থেকে উদ্ধার করে। বর্তমানে এই তিনজন গোদাগাড়ী থানায় আছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়িটি কাপড় ব্যবসায়ী সাজ্জাদ আলীর। দেড় মাস আগে ফসলের মাঠে তিনি মাটি আর টিন দিয়ে বাড়িটি বানান। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি দিয়ে বাড়ির মাটি গলানোর চেষ্টা করেন। এ সময় হঠাৎ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন কয়েকজন। তাঁরা বিস্ফোরণ ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন।

গোদাগাড়ী থানার ওসি বলেন, সাজ্জাদের মেয়ে সুমাইয়ার স্বামী জহুরুল ইসলাম নব্য জেএমবির সদস্য। ছয় মাস আগে নাশকতার মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছেন। জহুরুলের শ্বশুর সাজ্জাদ একসময় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে জামাতার উৎসাহে তিনি নব্য জেএমবির কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন।

এদিকে সহকর্মী নিহতের ঘটনা শুনে সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে রাজশাহীতে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেন্যান্স) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

 আরও পড়ুন: