রাজধানীতে গুলিতে আ.লীগের নেতা ও কলেজছাত্রী নিহত

শাহজাহানপুরের ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ
ছবি: প্রথম আলো

রাতের ঢাকায় এলোপাতাড়ি গুলিতে দুজন খুন হয়েছেন। তাঁদের একজন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু (৫৮)। অন্যজন সড়কে যানজটে আটকা পড়ে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন ওরফে প্রীতি (২২)। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জাহিদুলকে বহন করা মাইক্রোবাসের চালকও।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত জাহিদুলের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (মতিঝিল এলাকা)।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীর আহাজারি

প্রত্যক্ষদর্শী, আশপাশের দোকানি ও পুলিশ সূত্র বলছে, ঘটনার সময় শাহজাহানপুর এলাকায় যানজটে আটকে ছিল জাহিদুলকে বহন করা মাইক্রাবাসটি। হঠাৎ সড়কের উল্টো দিক থেকে (সড়ক বিভাজকের ফাঁকা অংশ দিয়ে) মুখোশধারী (কেউ বলছেন হেলমেট পরা) দুই দুর্বৃত্ত এসে জাহিদুলের মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। মাইক্রোবাসের কাচ ভেঙে জাহিদুলের শরীরে একাধিক গুলি লাগে। চালক মুন্নাও গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার আকস্মিকতায় সড়কে থাকা লোকজন এদিক–ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে। ভয়ে দোকানিরা ঝাঁপ ফেলে দোকান বন্ধ করে দেন। তখনো দুর্বৃত্তরা গুলি ছোড়া বন্ধ করেনি। একপর্যায়ে তারা সড়ক বিভাজকের ফাঁকা অংশ দিয়ে অন্য পাশে চলে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ বলছেন, সড়কের উল্টো পাশে একটি মোটরসাইকেল রাখা ছিল। সেই মোটরসাইকেলে করেই তারা পালিয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, ওই মোটরসাইকেলে করেই তারা এসেছিল। দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার পর অনেকে খেয়াল করেন, রক্তাক্ত অবস্থায় এক তরুণীও (সামিয়া) রাস্তায় পড়ে আছেন। এ সময় কয়েকজন এগিয়ে এসে জাহিদুল, মুন্না ও সামিয়াকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতার জাতীয় পরিচয়পত্র

ঘটনার পরপরই পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন শাহজাহানপুরে যান। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা, মাইক্রোবাসের কাচের টুকরাসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। শাহজাহানপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হায়াত প্রথম আলোকে বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে খুনিদের দ্রুত শনাক্ত করা যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

পুলিশ জানায়, জাহিদুল ইসলাম যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কী হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে অনেক দিন কারাগারে ছিলেন তিনি। পরে জামিনে মুক্ত হন। ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ড নামের একটি বিপণিবিতানের সামনে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

জাহিদুলের বাসা খিলগাঁওয়ের বাগিচা এলাকায়। মতিঝিল এলাকার আধিপত্য বিস্তার এবং ফুটপাতে দোকান বসিয়ে বাণিজ্য করা নিয়ে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছিল বলে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তবে তাঁকে খুন করার পেছনে দলীয় বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব নাকি অন্য কোনো বিষয় কাজ করেছে, সে সম্পর্কে পুলিশ তাৎক্ষণিক কিছু বলতে পারেনি। তবে ঘটনাটি পরিকল্পিত বলেই মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। আর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা এ নিয়ে এখনই কোনো কিছু অনুমান করতে পারছেন না।

গত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মো. আ. আহাদ সাংবাদিকদের বলেন, হেলমেট পরা এক ব্যক্তি গুলি করেছে বলে প্রাথমিকভাবে তাঁরা জানতে পেরেছেন।

জাহিদুলের নিহত হওয়ার খবরে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ভিড় জমান তাঁর অনুসারী নেতা–কর্মীরা। সেখানে তাঁর কয়েকজন অনুসারী জানান, মতিঝিলের এজিবি কলোনি থেকে বেরিয়ে বাগিচায় নিজের বাসায় ফিরছিলেন জাহিদুল। তাঁরা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ঘটনার বিচার দাবি করেন। তাঁদের কয়েকজন স্ত্রী ফারহানা ইসলামকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

এদিকে নিহত সামিয়ার বান্ধবী সুমাইয়া আক্তার হাসপাতালে প্রথম আলোকে বলেন, সামিয়া ফোন করে বলেছিলেন রাতে আজ (গতকাল) তাঁদের খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ার বাসায় থাকবেন। সামিয়ার বাসা শান্তিবাগে।

হাসপাতালে সামিয়ার স্বজনেরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি।