রবিউল ইসলাম লস্কর (৪২) হত্যায় জড়িত বাকি ব্যক্তিদের নাম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) জানিয়েছেন রিমান্ডে থাকা তিনজন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সালেহ ইমরান আজ শুক্রবার জানান, তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এসআই সালেহ ইমরান আরও জানান, যাত্রীবেশে বাসে বসে থাকা ২২ ডাকাতই রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম লস্কর হত্যায় যুক্ত ছিলেন। বাসে আরও কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। তাঁরাও ভয়ে কেউ রবিউলকে রক্ষায় এগিয়ে যাননি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআইয়ের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে রবিউলকে খুনের ঘটনার বিস্তারিত জানানো হয়। ৫ অক্টোবর রবিউল মিরপুরের ভাড়া বাসা থেকে আশুলিয়ার ডিইপিজেড এলাকার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বের হন। পরে রাত ১২টার দিকে রবিউলের মুঠোফোনে তাঁর মা ফোন করলে এক ব্যক্তি বলেন, রবিউলকে খুন করা হয়েছে। বলা হয়, লাশটি হেমায়েতপুর ও আমিনবাজারের মধ্যবর্তী একটি জায়গায় রাখা হয়েছে। পরদিন বিকেলে পুলিশ যমুনা ন্যাচারাল পিকনিক স্পটের কাছ থেকে রবিউলের লাশ উদ্ধার করে।
পিবিআই জানিয়েছে, এ ঘটনায় ডাকাত দলের প্রধান পটুয়াখালীর বসির মোল্লাকে গ্রেপ্তার করলে হত্যাকাণ্ডের কারণ বেরিয়ে আসে। পরে বসিরের তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর আট সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন শেখ হাফিজ (৩৫), আনোয়ার হোসেন (৩৫), আমির হোসেন (২৮), আল আমিন (২৮), জুয়েল (৩২), মো. নঈম (২২), তপন (২৮) ও নাজমুল (৩০)। তাঁদের মধ্যে আমির, তপন ও নাজমুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই জেনেছে, বাসের সবাই ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। ডাকাতিতে তাঁদের সম্পৃক্ততা ছিল।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ৪ অক্টোবর ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে নিরালা পরিবহনের একটি বাস তিন দিনের জন্য ভাড়া নেন ডাকাত দলের প্রধান বসির। বাসটি ভাড়া নেওয়ার পর বসির ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হন। নিরালা পরিবহনের স্টিকার তুলে তাতে ঢাকা-দৌলতদিয়া-খুলনা লেখেন। এ সময় গরু ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনের কাছে ডাকাতি করে দৌলতদিয়ায় রাতভর অবস্থান করে বসিরের দল।
পরদিন ৫ অক্টোবর দৌলতদিয়া থেকে ঢাকায় ফেরার পথে সাভার থেকে রবিউল ইসলামকে বাসে তোলেন তাঁরা।
পিবিআইয়ের প্রধান বলেন, ৫ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে নবীনগর থেকে রবিউলকে বাসে তোলা হয়। বাসে ওঠার পর ডাকাতির সময় রবিউল বাধা দেন। ডাকাত দলের সদস্যরা কয়েকজন রবিউলকে চেপে ধরেন এবং কাপড় দিয়ে মুখ বাঁধেন। এতেও কাজ না হওয়ায় ডাকাত দলের নেতা বসির তাঁর হাতে থাকা হুইল রেঞ্জ দিয়ে রবিউলকে আঘাত করেন। এতে বাসের মধ্যেই মারা যান রবিউল। এরপর নির্জন স্থান দেখে রবিউলের মরদেহ বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের কাছে ফেলে চলে যান ডাকাতেরা। বাসায় ফিরতে দেরি দেখে রাত ১২টার দিকে রবিউলের নম্বরে তাঁর মা ফোন করেন। অপর প্রান্ত থেকে এক অপরিচিত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে জানান, এই নম্বরের মালিক খুন হয়েছেন। তাঁর লাশ হেমায়েতপুর ও আমিনবাজারের মধ্যকার একটি জায়গায় রাখা হয়েছে। এই বলে কল কেটে দেন ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর রবিউলের মুঠোফোনটি ভেঙে ড্রেনে ফেলে দেন তাঁরা। ৬ অক্টোবর রবিউলের মরদেহ উদ্ধারের পর অজ্ঞাত হিসেবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
খবর পেয়ে রবিউলের পরিবার মর্গে গিয়ে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।
পরে এ হত্যার ছায়াতদন্ত শুরু করে পিবিআই। মামলার তদন্ত করেন এসআই মো. সালেহ ইমরান ও তাঁর দলের সদস্যরা। গোয়েন্দা তৎপরতা ও প্রযুক্তির সহায়তায় ১৩ অক্টোবর ডাকাত দলের প্রধান বসিরকে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সালেহ ইমরান সাংবাদিকদের জানান, ১৪ অক্টোবর ডাকাত দলের প্রধান বসির মোল্লা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ডেমরা, ঢাকার উপকণ্ঠ সাভার ও ধামরাইয়ে অভিযান চালিয়ে আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে আল আমিন, জুয়েল, হাফিজ, নঈম ও আনোয়ার গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করে বসিরসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।