মামলা দায়েরের দুই সপ্তাহেও গ্রেপ্তার হননি নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা অভিযুক্ত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহদাত হোসেন ওরফে স্বপন। তাঁর বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও। উল্টো তিনি শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ‘চিকিৎসা ছুটি’র আবেদন দিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন বিচারপ্রার্থী অভিভাবকেরা।
শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক সব আলমারির চাবি নিয়ে ছুটিতে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে বিদ্যালয়টিতে এক ধরনের অচলাবস্থা বিরাজ করছে। দাপ্তরিকভাবে তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্ব না দেওয়ায় দাপ্তরিক কাজে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি তিনি যেসব ক্লাসে পড়াতেন ওই সব ক্লাসও হচ্ছে না। এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছেন না অন্য শিক্ষকেরাও।
একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পিতৃতুল্য প্রধান শিক্ষক যখন তাঁর ছাত্রীদের সঙ্গে একের পর অশালীন আচরণ করে যাচ্ছিলেন, তখন আমরা বাধ্য হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি। কিন্তু মামলা দায়েরের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে এখনো গ্রেপ্তার কিংবা চাকরিচ্যুত করা হয়নি।’
অভিভাবকেরা বলেন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক অসুস্থতার সনদ দিয়ে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেই তাঁকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। একজন মামলার আসামি কীভাবে চিকিৎসা ছুটি ভোগ করেন তা নিয়েও প্রশ্ন অভিভাবকদের। এ অবস্থায় তাঁরা অভিযোগের বিচার পাবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে আছেন।
ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৩ মার্চ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়। তাঁর আগ থেকেই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু তিনি যাওয়ার সময় বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের চাবি ও দায়িত্ব কাউকে হস্তান্তর করেননি। এতে বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। তিনি যেসব শ্রেণিতে পড়াতেন সেগুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শাহদাত হোসেন ২৩ মার্চ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পরে ২৪ মার্চ তিনি অসুস্থ বলে চিকিৎসকের সনদ দিয়ে একটি আবেদন তাঁর কাছে পাঠিয়েছেন। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তিনি লিখিতভাবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার চিঠি তাঁর কাছে আসেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান শিক্ষককে তিনি সরাসরি চাকরিচ্যুত করতে পারেন না। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক, চট্টগ্রামের। তিনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আসা প্রতিবেদনটি সেখানে পাঠিয়েছেন। কিন্তু ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে মামলার (অভিযোগের) কপি দেওয়া হয়নি। তাই সেটি সংগ্রহ করে পাঠালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।
অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে সুবর্ণচরের চর জব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহেদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তারে তাঁর গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার অশ্বদিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহদাত হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে।
এ বিষয়ে এক ছাত্রীর অভিভাবক বাদী হয়ে গত ২৩ মার্চ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে চর জব্বর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।