কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার শিকার ওই নারীর নাম ইসমত আরা। তিনি বর্তমানে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম সহিদুল ইসলাম। তিনি রাজারহাট উপজেলার মেকুরটারি গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ইসমত আরার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর আগে গুদামশ্রমিক সহিদুল ইসলামের সঙ্গে রংপুরের শ্যামপুর কাটাবাড়ী গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে ইসমত আরার বিয়ে হয়। ওই সময় মৌখিকভাবে সহিদুলকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়ার কথা ছিল ইসমতের পরিবারের। তবে দারিদ্র্যের কারণে ওই টাকা দিতে পারেনি ইসমতের পরিবার।
ইসমত আরার মা স্বপ্ন বেগম বলেন, ‘সহিদুল যৌতুকের টাকার জন্য আমার মেয়েকে চাপ দিত। সে বারবার আমাকে টাকা দিতে বলে। আমার পক্ষে টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। আমার স্বামী কয়েক বছর আগে আরেকটি বিয়ে করে অন্য জায়গায় থাকেন।’
স্বপ্ন বেগম জানান, মেয়ে ইসমত বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) থেকে কাপড় কাটা ও সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে সেখানেই কাজ নেন ইসমত। এরপর থেকে সহিদুল ইসমতের কাজের টাকা দাবি করেন। ওই টাকার বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে ইসমতকে চাপ দেন। টাকা না পেয়ে রাত তিনটার দিকে ঘরের মশারি ও ইসমত আরার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন সহিদুল।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইসমত আরা বলেন, কিছুদিন ধরে সহিদুল যৌতুক ও কাজের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এ নিয়ে আগে ঝগড়া ও মারধর করেছেন। সন্তানের কথা চিন্তা করে সব মুখ বুজে সইতেন।
ইসমত বলেন, ‘আমাকে মেরে ফেলতে মশারি ও শরীরে আগুন দেয়। আমার চিৎকারে পাশের ঘর থেকে তার বড় ভাই ছুটে আসেন। তিনি আমাকে প্রথমে রাজারহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখান থেকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’
সহিদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কেউ নেই। প্রতিবেশীরা জানান, সহিদুল কোথায় গেছেন, সেটা তাঁরা জানেন না। যোগাযোগের চেষ্টা করেও সহিদুলের মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, ইসমত আরার শরীরে ১০ ভাগ পুড়ে গেছে। তাঁর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সরবরাহ নেই এমন ওষুধ কেনার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষ্ণ কুমার সরকার বলেন, মেয়ের মা ও ভাই সন্ধ্যার পর থানায় এসে অভিযোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে মামলা হবে। যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।