ক্রমাগত মানসিক চাপ দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল মোরশেদ চৌধুরীকে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী।
আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটা আমার দৃষ্টিতে একটা মার্ডার। ফোর্স ডেথ। আমি আমার স্বামীর আত্মহননের নেপথ্যে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার চাই।’
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবদুল মোরশেদ চৌধুরী গত বুধবার হিলভিউ আবাসিক এলাকার নাহার ভিলা নামের বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে পরিবার ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে মোরশেদ লিখেছেন, ‘আর পারছি না। সত্যি আর নিতে পারছি না। প্রতিদিন একবার করে মরছি। কিছু লোকের অমানুষিক প্রেসার আমি আর নিতে পারছি না। প্লিজ, সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আমার জুমকে (মেয়ে) সবাই দেখে রেখো। আল্লাহ হাফেজ।’
সংবাদ সম্মেলনে তাঁর স্ত্রী লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, ‘আমার স্বামীর ফুফাতো ভাই জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, পারভেজ ইকবাল চৌধুরী ও পাঁচলাইশের সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দীনের কাছে থেকে ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যবসাসূত্রে ২৫ কোটি টাকা নেয় মোরশেদ। ২০১৮ সালের লভ্যাংশসহ তাদের পরিশোধ করা হয় ৩৮ কোটি টাকা। এরপর থেকে আরও টাকা দাবি করতে থাকে তারা। এ জন্য আমার স্বামীকে তারা ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে চাপ এবং হুমকি–ধমকি দিতে থাকে। ২০১৮ সালের মে মাসে আমার স্বামীকে পাঁচলাইশের এম এম টাওয়ারে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আরও ১২ কোটি টাকা বাড়তি তারা পায় উল্লেখ করে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়।
স্বামী, আমার ও আমার মেয়ের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়। আজ পর্যন্ত তা ফেরত পাইনি।’ এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় তখন কোনো মামলা নেওয়া হয়নি বলে ইশরাতের অভিযোগ।
২০১৯ সালে তাঁদের হিলভিউর বাসায় হামলা করা হয় বলে অভিযোগ করেন ইশরাত। তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমার স্বামীকে হয়রানি, মানসিক নির্যাতন ছাড়াও বাসায় হামলা, কন্যাকে অপহরণ এবং স্বামীকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয় অনেকবার। তাদের নির্যাতনের কারণেই মূলত আমার স্বামী আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়।’ৎ
আত্মহত্যার আগের দিন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা রাসেল পরিচয়ে একটি নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ইশরাত।
মোরশেদের মৃত্যুর পর পুলিশের কর্মকর্তা (উপকমিশনার) বিজয় বসাক ও মোরশেদের একটি অডিও কথোপকথন প্রকাশ্যে আসে। তাতে মোরশেদকে ধরে নিয়ে আসার কথা বলছিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইশরাত জাহান বলেন, ‘বিজয় স্যারের সঙ্গে আমরা মধ্যস্থতা বৈঠকে বসেছিলাম। তখন পারভেজরা আমার স্বামীকে চাকরি করতে পারবে না বলে হুমকি দিয়েছিল। তখন বিজয় স্যার তাদের বলেছিলেন, “এটা আপনারা করতে পারেন না। মোরশেদ তাঁর চাকরি করবেন।” তিনি সাহায্য করেছিলেন আমাদের।’
জানতে চাইলে উপকমিশনার বিজয় বসাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোরশেদ আসবে আসবে করে অফিসে আসছিলেন না। তখন আমি তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলে ধরে আনার কথা বলেছিলাম। তাঁর বিরুদ্ধে তখন মামলা হয়ে যাচ্ছিল। তিনি (মোরশেদ) আমাকে অনুরোধ করেছিলেন যাতে তার বিরুদ্ধে মামলা না নিই। উপরন্তু আমি তাঁর চাকরিটা বাঁচিয়েছি। এখন তদন্তাধীন বিষয়ে বেশি কিছু বলা উচিত হবে না।’
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য আরশেদুল আলম বাচ্চুর নামও এসেছে এ ঘটনার পেছনে। এ বিষয়ে ইশরাত জাহান বলেন, ‘একবার বৈঠকে বাচ্চু টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। আমি তাকে চিনতাম না। আমি তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি, টাকা কি আপনি পান নাকি উনারা পান?’
এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল ইশরাত জাহান চৌধুরী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা করেন। তাতে পারভেজ ইকবাল, জাবেদ ইকবাল, সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দিন, যুবলীগ নেতা রাসেল ও অজ্ঞাতনামমা সাত আটজনকে আসামি করে মামলা করেছেন।