যৌনপল্লিতে নিজের কিশোরী মেয়েকে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে আটক করা হয়েছে তার বাবাকে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছে, ওই ব্যক্তি নিজের মেয়েকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা ও এক যৌনকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তির বাড়ি নওগাঁয়। আর গ্রেপ্তার হওয়া যৌনকর্মীর বাড়ি নীলফামারীতে। পুলিশ ও ভুক্তভোগী কিশোরী জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি পেশায় রিকশাচালক। তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ফেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। তবে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। তাঁর প্রথম স্ত্রীও পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের দেখভাল করতেন না অভিযুক্ত ব্যক্তি। এই কিশোরী তাঁর বড় মেয়ে। বাবা-মার বিচ্ছেদ হওয়ায় কিশোরী মেয়েটি একবার ফুফুর কাছে, আবার মায়ের কাছে—এভাবে দিন পার করছিল। তার বাবা মাঝেমধ্যে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে আসা-যাওয়া করতেন। এর সুবাদে এক যৌনকর্মীর সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। পরে ওই ব্যক্তি তাঁর মেয়েকে নানা কথায় ভুলিয়ে ও ঢাকায় নেওয়ার কথা বলে গত শনিবার দৌলতদিয়ায় নিয়ে আসেন।
কিশোরীটি জানায়, ঢাকায় ভালো জায়গায় রেখে আসার কথা বলে তার বাবা তাকে দৌলতদিয়ায় নিয়ে আসেন। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে দৌলতদিয়া যৌনপল্লির প্রধান ফটকের কাছে একটি মুঠোফোনের দোকানের সামনে বসে ওই ব্যক্তি যৌনকর্মীর সঙ্গে দরদাম করতে থাকেন। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশে খবর দেন। শনিবার রাত নয়টার দিকে পুলিশ যৌনপল্লি থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করে।
রোববার দুপুরে থানা হেফাজতে ভুক্তভোগী কিশোরীটির সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। বাবার অপরাধের বিচার চায় কি না, জানতে চাইলে কিশোরীটি কান্নায় ভেঙে পড়ে। সে বলে, ‘আব্বু ভুল করে ফেলেছে। আব্বুকে ভালো হওয়ার জন্য একবার সুযোগ দেন স্যার। আমি জানতাম না আব্বু এত খারাপ হয়েছে।’ এ সময় সে আরও বলে, ‘আমি আমার মায়ের কাছে যেতে চাই।’
গ্রেপ্তার যৌনকর্মী জানান, কয়েক দিন আগে কিশোরীটির বাবা একটি ভালো মেয়ে এনে দেওয়ার বিনিময়ে ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন। শনিবার রাতে ওই কিশোরীকে নিয়ে আসার পর দরদাম চলার সময় পুলিশ তাঁদের আটক করে। তবে এই নারী দাবি করেন, কিশোরীটি যে ওই ব্যক্তির মেয়ে, তা তিনি জানতেন না।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এজাজ শফী প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ শনিবার রাতে ভুক্তভোগী কিশোরীকে উদ্ধার করে। এ সময় হাতেনাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা হয়েছে। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এজাজ শফী আরও জানান, উদ্ধার হওয়া কিশোরীর নির্ভরযোগ্য কোনো অভিভাবক না থাকায়, প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত সরকারি কোনো পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখার আবেদন করে রাজবাড়ীর মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়েছে।