নরসিংদী সদরে এক বছর বয়সী শিশু শুভকে মেঝেতে ছুড়ে, বুকে পা দিয়ে হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তার বাবা সুমন মিয়া (২৬)। সুমন তাঁর জবানবন্দিতে বলেছেন, রাগান্বিত হয়েই তিনি নিজের একমাত্র সন্তানের সঙ্গে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেন। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে আদালতে তোলা হলে এই জবানবন্দি দেন তিনি।
গতকাল সোমবার বেলা তিনটার দিকে সদর উপজেলার শীলমান্দী ইউনিয়নের নগর বানিয়াদী গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই দিন বিকেলেই অভিযুক্ত সুমন মিয়াকে পার্শ্ববর্তী একটি বাজার থেকে আটক করে পুলিশ। পরে ওই রাতেই সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে নরসিংদী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন তাঁর স্ত্রী ও শিশুটির মা মিতু বেগম।
সুমন মিয়া এলাকায় লরিতে করে ইট পরিবহনকাজের একজন হেলপার। তিনি প্রায়ই স্থানীয় বখাটেদের সঙ্গে গাঁজা সেবন করতেন বলে পরিবার ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেকেরচর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক অভিজিৎ চৌধুরী জানান, সুমন মিয়াকে তাঁর স্ত্রীর করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে ১৬৪ ধারায় তাঁর জবানবন্দি নেওয়া হয়। হত্যার দায় স্বীকার করে দেওয়া তাঁর ওই জবানবন্দি রেকর্ড করেন নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামীমা আক্তার।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বিয়ের পর থেকেই সুমন মিয়া ও মিতু বেগমের মধ্যে ঝগড়াবিবাদ লেগেই থাকত। গতকাল (সোমবার) দুপুরে কাজ থেকে ফেরার পর ভাত দিতে দেরি হওয়ায় মিতুর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ছিলেন সুমন। ওই সময়ই ঘুমন্ত শুভ (১) জেগে ওঠে প্রচণ্ড কান্নাকাটি করতে থাকে। এ সময় শিশুটির বাবা রেগে গিয়ে শিশুটিকে খাট থেকে হাতে তুলে নিয়ে ছুড়ে ফেলেন ঘরের মেঝেতে। পরে বুকে পা দিয়ে চেপে ধরেন তিনি। রক্তে ওই শিশুর নাক-মুখ ভেসে যায়। পরে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাদিরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিশুটিকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার পরই শিশুটির মা মিতু বেগমের চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হন। ঘটনা শুনে শিশুর বাবাকে ঘরের ভেতরে রেখে বাইরে থেকে ছিটকিনি দিয়ে দেন উপস্থিত লোকজন। পরে পেছনের জানালা ভেঙে পালিয়ে যান সুমন মিয়া। এ ঘটনা মানুষের মুখে মুখে গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। পরে সুমন মিয়া পাশের ফুলতলা বাজার এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে ধরে বেঁধে ফেলেন। পরে খবর পেয়ে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ গিয়ে তাঁকে আটক করে নিয়ে আসে।
নিহত শিশুর মা মিতু বেগম বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই আমার বাচ্চাকে মেঝেতে ছুড়ে ফেলে বুকে পা চেপে ধরেন তার বাবা সুমন মিয়া। আমার একমাত্র সন্তান হত্যার বিচার চাই আমি।’
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান জানান, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত সুমন মিয়াকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।