সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে মুঠোফোন তল্লাশি করে ছাত্রীদের বের করে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষ। হলের প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোর কাছে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
হলের সাধারণ ছাত্রীরা কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন। তাঁরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন বলে জানিয়েছেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, হলের প্রাধ্যক্ষ ছাত্রীদের ছাত্রত্ব বাতিল, গোয়েন্দা নজরদারি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেন।
সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে ডেকেছি। তাঁদের মোবাইল চেক করা হচ্ছে। তাঁরা ফেসবুকে ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে গুজব ছড়াচ্ছে। মুচলেকা দিয়ে তাঁদের স্থানীয় অভিভাবকদের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
ঠিক কতজন ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্ক বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে—এমন অন্তত চারজন ছাত্রীর পরিচয় জানতে পেরেছে প্রথম আলো।
দিবাগত রাত ১১টা ৪৮ মিনিটে এক ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই ছাত্রীর বাবা তাঁর মেয়েকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে দ্রুত চলে যান। চলে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।
দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে এক ছাত্রীর বাবা হলের ফটক দিয়ে ভেতরে ঢোকেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে ফোন করে হলে এসে মেয়েকে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এরপর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি ধামরাই থেকে হলের ফটকে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে তিনি সেখান থেকে চলে যান।
চলে যাওয়ার সময় এই অভিভাবক সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর মেয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। ভবিষ্যতে যেন এমন আর না হয়, এ জন্য হল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ডেকে সতর্ক করেছে।
হল কার্যালয়ের একটি সূত্রের ভাষ্য, রাত ৯টা থেকে অন্তত ৫০ জন ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে সবাইকে একসঙ্গে বের করে দেওয়া হয়নি।
সূত্রটির এই ভাষ্য যাচাই করা যায়নি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হকের দাবি, রাতে আট ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তিনি।
হলের প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, দুই ছাত্রীর স্থানীয় অভিভাবকদের ডেকে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাতে হলের ফ্লোরে ফ্লোরে হাউস টিউটররা পাহারা বসান। এতে ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
একাধিক ছাত্রী জানান, মূলত যে ২৬ ছাত্রী ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, প্রথমে তাঁদের বিচার করছে হল প্রশাসন।
প্রাধ্যক্ষের হুমকি
বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রদীপ্ত ভবনের নিচে প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা ছাত্রীদের ডেকে হুমকি দেন। তাঁর হুমকির অডিও ক্লিপ প্রথম আলোর কাছে এসেছে।
ছাত্রীদের উদ্দেশে সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, ‘অনেকে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেয়। ইনটেলিজেন্স সেল দেখবে যে কারা কারা বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিচ্ছে। আই ডোন্ট ওয়ান্ট অ্যানি ইনভলভমেন্ট। এরপর এই হলে ছাত্রলীগ যদি গন্ডগোল করে আমাকে বিচার দেবে। জেনারেল মেয়ে গন্ডগোল করলে আমাকে বিচার দেবে। এখন থেকে হল সিট হল প্রশাসন দেবে। আর কোনো পয়েন্টে এর বাইরে আর কোনো সিট হবে না। হলে যদি আর কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে বা তোমরা কোনো পোস্ট দেওয়ার চেষ্টা করো হলকে বিভ্রান্ত করার জন্য, তাহলে কিন্তু আমরা সরকারকে বলব...আমার নলেজের বাইরে আমার ভিডিও যে আপলোড করে সেটা কিন্তু ক্রাইম। আজকে আমি বলে দিলাম সেটা কিন্তু সাইবার ক্রাইম...আই ওয়ান্ট টু বি লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। কারও কিছু প্রশ্ন আছে?’
জবাবে ছাত্রীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহানকে কেন্দ্র করে যা যা ঘটেছে, তাতে হলের দুই হাজার ছাত্রী সম্পৃক্ত ছিল বলে উল্লেখ করেন। তখন সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, ‘দুই হাজার মেয়ে কিছু করেনি। আমার সিসিটিভি ফুটেজে আছে কারা কারা করেছে। দুই হাজার মেয়ে সাক্ষর দাও, আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেব। আমি দুই হাজার মেয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করে দেব। আমার শিক্ষকেরা দেখেছে, আমার সিসিটিভি প্রমাণ আছে ওরা মেরেছে। তোমরা যদি মেরে থাক, নাম লেখ। ওই দিন যেটা হয়েছে, সেটা অপপ্রচার। ওই মেয়ে যার পা কেটেছে, সে নিজে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ওর শুধু পা-ই কাটা হয়েছে। এই মেয়েটাকে যে পরিমাণ মারা হয়েছে, সেটা কি বিচারে মারা হয়েছে? যে মেয়ে ভয় পেয়েছে, সে নিজে বলেছে। মোবাইল দিয়ে কী করছ?’