মুখে কুলুপ এটেছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী হত্যা মামলার আসামি রিপন নাথ। কেন, কী কারণে, কার নির্দেশে কারাগারের মতো সুরক্ষিত জায়গায় খুন করলেন, সে ব্যাপারে কোনো কথা বলছেন না তিনি। গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অমিত মুহুরী খুন হন।
মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজনের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না তিনি। এই চুপ থাকার কারণে অমিত খুনের রহস্য দানা বেঁধে উঠছে। ইচ্ছে করে চেপে যাচ্ছেন, নাকি নির্দেশদাতারা চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। তাই কারাবন্দী রিপনকে অমিতের বাবার করা মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখানোর আবেদন করেছে পুলিশ। আগামী সোমবার আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এরপর রিমান্ড আবেদন করা হবে।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মির্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, ঘটনার সময় রিপন অমিত মুহুরীর কক্ষে ছিলেন। অন্য বন্দীরা তিনি অমিতকে ইট দিয়ে মারতে দেখেছেন। কিন্তু কেন এটি করলেন তা বলছেন না। তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। সোমবার শুনানি শেষে গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
>সন্ত্রাসী অমিত নিহতের মামলা
অতিরিক্ত আইজিপিকে প্রধান করে তিন সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন
রিপন নাথ নামে এক বন্দীর ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে গত বুধবার রাত একটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী অমিত মুহুরীর মৃত্যু হয়। চট্টগ্রাম কারাগারের ৩২ নম্বর সেলের ৬ নম্বর কক্ষে থাকতেন তাঁরা। এই ঘটনায় চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার নাশির আহমেদ বাদী হয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে বন্দী রিপন নাথকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে অমিতের বাবা অভিযোগ করছেন চট্টগ্রামের এক নেতা টাকার বিনিময়ে পরিকল্পিতভাবে তাঁর ছেলেকে কারাগারে খুন করিয়েছেন। ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাশহুদুল কবিরকে প্রধান করে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। পাশাপাশি কারা অধিদপ্তর অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। বাকি দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ–কারা মহাপরিদর্শক ফজলুল হক ও নোয়াখালী কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ–কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) ফজলুল হক গতকাল দুপুরে বলেন, তদন্ত অব্যাহত আছে। বিভিন্ন বন্দীর বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। তবে বন্দী রিপন মুখ খুলছেন না।
অমিতের বাবা অরুণ মুহুরী বলেন, পরিকল্পিতভাবে তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে। বন্দী রিপনকে পরিকল্পিতভাবে অন্য কক্ষ থেকে অমিতের কক্ষে ঘটনার দিন বিকেলে আনা হয়। এদিকে গতকাল সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকে বন্দীদের স্বজনের ভিড় দেখা গেছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। আতঙ্কে আছেন ভেতরে থাকা বন্দীরা। সেলে থাকা এক বন্দীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে নগরের ডবলমুরিং থানার এক বাসিন্দা বলেন, সেলে খুনের ঘটনার পর ভাইকে দেখতে এসেছেন। তাঁরা আতঙ্কিত।
আরও পড়ুন:
খুন করে নৃশংসতায় মেতে উঠতেন অমিত মুহুরী