যানজট আর যান-সংকটে থমকে থাকা ঢাকার রাস্তায় গতকাল বুধবার বেশ কয়েকজন নারী হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেউ
ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখে নিজেদের হয়রানির কথা জানিয়েছেন। প্রথম আলোর সঙ্গে তাঁরা কয়েকজন কথা বলেছেন।
তাঁদের অভিযোগ, ৭ মার্চের ভাষণ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অংশ নিতে যাওয়া বা ফেরার সময় বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের হাতে তাঁরা নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। শারীরিকভাবেও হেনস্তার অভিযোগ করেছেন কেউ।
হয়রানির গুরুতর অভিযোগ করেছে এক কলেজছাত্রী। ফেসবুকে এ বিষয়ে তার স্ট্যাটাসটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কয়েক হাজার মানুষ শেয়ার দিয়েছেন। অনেকে সেটিতে মন্তব্য করেছেন। মেয়েটি তার স্ট্যাটাসে বলেছে, বাংলামোটরে সে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। পরনে কলেজের ড্রেস ছিল। সেখানে ১৫-২০ জন যুবকের একটি দল তাকে ঘিরে ধরে। তারা তাকে চড়-থাপ্পড় দেয়। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। তার পরনের পোশাকের বোতাম ছিঁড়ে যায়। পরে একজন পুলিশ এসে তাকে সেখান থেকে বের করে একটা বাসে তুলে দেয়। সবশেষে সে লিখেছে, ‘যারা মেয়ে মলেস্ট করে, তাদের দেশে আমি থাকব না...থাকব না...থাকব না।’ সন্ধ্যায় অবশ্য মেয়েটি তার স্ট্যাটাস সরিয়ে নেয়। এর কারণ হিসেবে আরেকটি স্ট্যাটাসে সে লিখেছে, তার স্ট্যাটাসটি রাজনৈতিক প্রচারে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে সে সরিয়ে নিয়েছে।
শুধু এই মেয়ে নয়, আরও বেশ কয়েকজন গতকাল হয়রানির শিকার হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন কারওয়ান বাজার মোড়ে। প্রথম আলোকে ওই শিক্ষার্থী বলেন, বাস থেকে নামার একটু পরই ১০-১৫ জন তরুণ তাঁকে গোল করে ঘিরে ধরে। এদের কারও কারও হাতে সমাবেশে যোগ দেওয়ার প্ল্যাকার্ড ছিল। তারা তাঁর ওড়না ধরে টানাটানি করে, শরীরে হাত দেয় এবং গালাগাল করে। তাঁর অভিযোগ, একটু দূরেই অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু তারা বিষয়টি দেখেও এগিয়ে আসেনি।
রামপুরা থেকে স্কুটি চালিয়ে ক্লাসে যাওয়ার সময় হয়রানির শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক গালাগাল শুনতে হয়েছে। অনেকে রাস্তা দিচ্ছিল না।’
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, হল থেকে বের হয়ে শাহবাগ যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন তিনি। শহীদ মিনার পর্যন্ত হেঁটে আসতে অসংখ্যবার গালাগাল শুনতে হয়েছে তাঁকে। এরপর রিকশা নিয়ে রওনা হয়ে চারুকলার সামনে এলে একদল ছেলে পানির বোতল থেকে পানি ছিটিয়ে পুরো ভিজিয়ে দেয় তাঁকে।
মিছিল থেকে হয়রানির বিষয়টি নিয়ে গতকাল রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর কথা বলেছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি একাত্তরকে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না। এ ধরনের ঘটনা সম্পর্কে আমি অবহিত নই। তবে যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তা খুবই জঘন্য এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলব বিষয়টি খুঁজে দেখে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে।’