ফেনীর সোনাগাজীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। এ কথা জানিয়েছেন বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির জাতীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্তলাল সেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সম্মেলন কক্ষে আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
সোনাগাজীর ওই মাদ্রাসাছাত্রী এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন। তাঁর শরীরের ৭৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েটির ফুসফুসকে সক্রিয় করতে গতকাল মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার করা হয়।
অধ্যাপক সামন্তলাল সেন বলেন, আজ সকালে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। সিঙ্গাপুরে পাঠানোর মতো অবস্থায় নেই ছাত্রীটি।
আজই অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীটির শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে আসেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মো মুরাদ হাসান। তিনি জানান, সিঙ্গাপুরে যাওয়ার মতো সুস্থ হলেই তাঁকে পাঠানো হবে। সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে খোঁজখবর রাখছেন।
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় গত শনিবার আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে মেয়েটিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন মেয়েটির মা। মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীটির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিনই গুরুতর আহত অবস্থায় ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
লাইফ সাপোর্টের যাওয়ার আগে গত রোববার অগ্নিদগ্ধ ওই ছাত্রী চিকিৎসকদের কাছে জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরিহিত চারজন তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই চারজনের একজনের নাম ছিল শম্পা।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল সোনাগাজীতে সাংবাদিকদের বলেন, শম্পা নামের যে হামলাকারীর কথা অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী বলেছেন, সেই শম্পাকে পুলিশ গতকাল সকালে সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে সোনাগাজী থানার পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার করা নারীর নাম উম্মে সুলতানা ওরফে পপি।
গতকাল মাদ্রাসাছাত্রীটির পরিবার বলেছে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তারা আস্থা রাখতে পারছে না। হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে মেয়েটিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনাকে পুলিশ ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি মামলার এজাহার নিয়েও পুলিশ কূটচাল চেলেছে।
পরিবারের এমন অভিযোগের পর আজ সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি উপজেলার মাদ্রাসাছাত্রীকে হত্যাচেষ্টার মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে আজ অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সরাফউদ্দিন। ওই মাদ্রাসার প্রভাষক আফসার উদ্দিন ও ছাত্র আরিফের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন একই আদালত।