ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় ছিনতাই হওয়া ১৪১ ভরি স্বর্ণালংকার মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ছিনতাইকারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে উপজেলার বণিকপাড়া এলাকার এক পুকুরপাড় থেকে সোনার অলংকারগুলো উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে উপজেলার কুট্টাপাড়া এলাকার সাঈদুল হক (৪০) ও বড্ডাপাড়া এলাকার এমরান খাঁ (৩৫) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া নিত্য তলাপাত্র নামের আরেক ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিকাল বাজারের হাজী সুপার মার্কেটের আপন স্বর্ণ শিল্পালয়ের মালিক তপন বণিক (৬৫)। গত মঙ্গলবার রাতে সাড়ে আটটার দিকে দোকান বন্ধ করেন তিনি। এ সময় দোকানের সব সোনার অলংকার গুছিয়ে ব্যাগে নিয়ে রিকশায় করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তপন। তাঁর সঙ্গে ছিল ছেলে বিষ্ণু বণিক (২৩)। উপজেলার বড় দেওয়ানপাড়ার মোতালিব মিয়ার বাড়ির সামনে পৌঁছামাত্রই বিপরীত দিক থেকে আসা হেলমেটে পরা মোটরসাইকেলের তিন আরোহী তাঁদের পথ রোধ করেন। এ সময় মোটরসাইকেলের আরোহীরা তপন, তাঁর ছেলে বিষ্ণু ও রিকশাচালকের চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দেন। পরে তপনের হাতে থাকা সোনার অলংকারভর্তি ব্যাগ ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। একপর্যায়ে ওই লোকজনের সঙ্গে তপন ও তাঁর ছেলের ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় একজনের পরনের গেঞ্জি ও হেলমেট পড়ে যায়। পরে ওই ব্যক্তিরা বিষ্ণুকে বেধড়ক মারধর করেন ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তপনের মাথায় আঘাত করেন। এরপর তাঁরা ১৮০ ভরি সোনার অলংকারভর্তি ব্যাগ ও সাড়ে আট লাখ টাকা নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এ সময় তপনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে যান। আহত তপন ও তাঁর ছেলেকে উদ্ধার করে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিনই তপন বণিক সরাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
পুলিশ বলছে, তারা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযানে নামে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা এলাকায় একটি বাসে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত সাঈদুল ও এমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার রাতে উপজেলার বণিকপাড়া এলাকার নিত্য তলাপাত্রের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। নিত্য তলাপাত্রও ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত বলে পুলিশ জানতে পারে। তবে শুক্রবার সকালেই নিত্য তলাপাত্র ভারতে পালিয়ে যান। পরে নিত্যর বাড়ির পাশের একটি পুকুরপাড়ে মাটি খুঁড়ে ১৪১ ভরি সোনার অলংকার উদ্ধার করা হয়।
তপন বণিক প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাই করা সোনার অলংকারের বাজারমূল্য ৪২ লাখ টাকার মতো। হেলমেট পরা থাকায় ছিনতাইকারীদের মুখ দেখতে পারেননি তিনি।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে ভারতে থাকা নিত্য তলাপাত্রের সঙ্গে তাঁর ছেলে রাজ তলাপাত্র মোবাইলে কথা বলে। নিত্যর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজ পুলিশকে সোনার অলংকার লুকিয়ে রাখার স্থান দেখিয়ে দেয়। পরে পুকুরপাড়ে মাটি খুঁড়ে ১৪১ ভরি অলংকার উদ্ধার করা হয়। রাজ তলাপাত্রকে থানায় রাখা হয়েছে। মামলায় তাঁকে সাক্ষী হিসেবে দেখানো হবে।
ওসি আরও জানান, ছিনতাই হওয়া বাকি সোনার অলংকার ও নগদ টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, ছিনতাইকারীরা কিছু টাকা নিজেরদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে বাকি টাকা ও অলংকার নিয়ে নিত্য তলাপাত্র ভারতে পালিয়ে গেছেন।