পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হানাহানি লেগেই আছে। সবশেষ গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রতিপক্ষের হামলায় দুজন আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত এক মাসে নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় দলটির অন্তত ২৭ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার খেতাছিড়া গ্রামের একটি দোকানের সামনে বসে ছিলেন আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক সিদ্দিক খান (৩৮) ও বিজয়ী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক মোস্তফা খান (৪০)। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। গুরুতর আহত সিদ্দিক খানকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর মোস্তফা খান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ সম্পর্কে সিদ্দিক খান বলেন, ‘আমি দোকানে বসে ছিলাম। মোস্তফা সেখানে এসে আমার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করেন। এরপর কয়েকজন নিয়ে আমাকে মারপিট করেন। উপজেলা নির্বাচনের জের ধরে আমাকে মেরেছেন।’
তবে মোস্তফা খান দাবি করেন, ‘সিদ্দিকই প্রথম আমাকে মারপিট শুরু করেন।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশরাফুর রহমানের আধিপত্য নিয়ে বিরোধ রয়েছে। গত ১৮ জুন অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আশরাফুর রহমানের ভাই রিয়াজ উদ্দিন চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। ২৩ মার্চ রিয়াজ উদ্দিনের সমর্থকেরা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হোসাইন মোশারেফসহ দুই জনকে কুপিয়ে জখম করেন। এ ঘটনার জের ধরে গত ২৫ মার্চ গুলিসাখালী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি জনি তালুকদারকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন বিজয়ী হন। নির্বাচনের পর গত ১৯ জুন উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি লাভলু তালুকদার (৩৫) স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আহত হন। ২০ জুন আওয়ামী লীগ কর্মী উপজেলার টিকিকাটা গ্রামের মোস্তফাকে (৪০) মারধর করে স্বতন্ত্র প্রার্থী লোকজন। গত ২৯ জুন মিরুখালী ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রিন্স মাহামুদকে (৩৬) কুপিয়ে জখম করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন। চলতি মাসেও অন্তত চারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
রফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে আমাদের নেতা-কর্মীরা এখন বিজয়ী প্রার্থীর লোকজনের হাতে মার খাচ্ছেন। তাঁরা (আশরাফ ও রিয়াজ উদ্দিন) আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মারপিট করে মাঠ দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।’
এ সম্পর্কে রিয়াজ উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এমাদুল হক খান বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনের পর আশরাফুর রহমানের অনুসারীরা প্রতিপক্ষের লোকজনের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন। রিয়াজ উদ্দিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর নির্যাতিত কর্মীরা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমরা তাঁদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছি।’