প্রথম আলো, বিডি নিউজসহ বিভিন্ন নামে ভুয়া ওয়েবসাইট খোলার অভিযোগে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে তাঁকে আটক করে র্যাব-২।
র্যাব জানায়, আটক ব্যক্তির নাম এনামুল হক। তিনি নিজেকে পিএইচডি গবেষক হিসেবে পরিচয় দিতেন। এনামুল দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসব ভুয়া ওয়েবসাইট পরিচালনা করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার এসপি মহিউদ্দিন ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, এনামুল প্রথম আলোসহ বিভিন্ন অনলাইনের নামে ২২টি ভুয়া ওয়েবসাইট খুলেছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এগুলোর নিউজ আপলোড করতেন। সম্প্রতি তিনি দেশে আসেন। তবে এনামুল হক অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। বিষয়টি এ রকম—তাঁর পরিবার অপহরণের কথা বলবে, অন্যদিকে তিনি কোরিয়া পালিয়ে যাবেন। তবে গত ১৮ নভেম্বর র্যাবের কাছে বিভিন্ন অনলাইন থেকে চিঠি দেওয়া হয় যে ভুয়া নামে ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে। এর পর তদন্ত করে এনামুলের ফোন ও নাম পাওয়া যায়। এর পর আজ সকালে এনামুলকে আটক করা হয়। তিনি পাবনা ঈশ্বরদী থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ঢাকায় আসেন।
এদিকে এনামুলের স্ত্রী নাজমিন সুলতানা গতকাল শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে ২৩ অক্টোবর দেশে এসেছিলেন এনামুল। বুধবার রাত একটার দিকে ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে তাঁর ফেরার কথা ছিল। সে জন্য তিনি বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি ঘুরে বিমানবন্দরের কাছে আশকোনায় এক বন্ধুর ছোট ভাইয়ের বাসায় উঠেছিলেন। বুধবার রাত ১০টার দিকে নিজের ছোট হ্যান্ড ট্রলি আর ল্যাপটপের ব্যাগ কাঁধে বিমানবন্দরের উদ্দেশে বের হন এনামুল। বন্ধুর ছোট ভাই এনামুলকে রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিচ্ছেন—এমন দৃশ্যও ওই এলাকার সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে। তিনি রিকশা থেকে নামার পর কোরিয়া থেকে শাকিল নামে আরেক পরিচিত ছোট ভাই ফোন করেন। তখন এনামুল তাঁকে জানান, তিনি বিমানবন্দরে ঢোকার মুখেই রয়েছেন। এই শেষ। এরপর থেকেই তাঁর কোনো খোঁজ নেই। যে এয়ারলাইনসে তাঁর যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে তাঁরা খোঁজ নিয়েও কিছু পাননি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, এনামুলের নিখোঁজের বিষয়ে তাঁদের পরিচিত এক তরুণ ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর কাছে অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। বলা হয় এনামুল হকের পরিবারকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। পরে এনামুলের স্ত্রী তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন।
এনামুলের স্ত্রী নাজমিন বলেন, ওই নম্বরে ফোন করা হলে তারা এনামুলের বাংলাদেশে ব্যবহৃত নম্বর থেকে নাজমিনকে ফোন দেয়। বলে, এনামুল ভালো আছে, সমস্যা নেই। যা বলা হবে সব গোপন রাখতে হবে। তারাই এনামুলকে গুম করে রেখেছে। তাদের কথামতো কাজ করলে এনামুলকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এনামুলের সঙ্গে নাজমিনের কোনো কথা হয়নি।
নাজমিন বলেন, এরপর কথিত অপহরণকারীরা বৃহস্পতিবার দেড় লাখ টাকা চায়। তখন তিনি বলেন, এত রাতে কীভাবে টাকা জোগাড় হবে, শুক্রবার ব্যাংকও বন্ধ। তারা বলে, ভোর ছয়টার মধ্যে যদি দেন, তাহলে ভোরে ফেরত দেব। ভোরে ফেরত দিতে সুবিধাও হবে। অনেক চেষ্টা করে শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে তাঁরা অপহরণকারীদের দেওয়া নম্বরে এক লাখ টাকা পাঠান। অপহরণকারীরা আধঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলে। এরপর থেকেই তাদের ফোনগুলো বন্ধ।
আরও পড়ুন :
কোরিয়া যাওয়ার পথে পিএইচডি গবেষক ‘অপহরণ’