ভিপি নুরুলকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে তোপের মুখে উপাচার্য ও প্রক্টর

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডাকসু ভিপি নুরুল হককে দেখতে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন প্রক্টর গোলাম রব্বানী। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডাকসু ভিপি নুরুল হককে দেখতে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন প্রক্টর গোলাম রব্বানী। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের হামলায় আহত ডাকসু ভিপি নুরুল হককে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর গোলাম রব্বানী। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে তাঁদের পদত্যাগ করতে বলেন বিক্ষুব্ধরা। এ সময় বিক্ষুব্ধরা উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমাদের গুলি করেন স্যার। আমাদের মেরে ফেলেন। আমরা কিছু করব না।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরুলকে গতকাল রোববার রাতে দেখতে যান উপাচার্য ও প্রক্টর। এ সময় তাঁরা তোপের মুখে পড়েন। পরে তাঁরা হাসপাতাল থেকে চলে আসেন।

গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হককে তাঁর কক্ষে ঢুকে আলো নিভিয়ে পেটান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। এই মঞ্চের অনেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। এ সময় নুরুলের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্তত ৩০ জনকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাঁদের মধ্যে গতকাল রাত পর্যন্ত ১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

ঘটনার সময় হামলাকারীরা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এ পি এম সুহেলকে ডাকসু ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেন। সুহেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কয়েক দফা মারধরের শিকার আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন ফারাবীকে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তুহিন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং সুহেল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এ ছাড়া হামলায় আহত নুরুলের ভাই আমিনুর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

গতকাল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ঢাবির উপাচার্য ও প্রক্টর। নুরুলসহ অন্যরা তাঁদের কাছে হামলার বিবরণ দেন। এ সময় উপাচার্য বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে একটি ঘটনা ঘটানোর প্রয়াস ছিল। ছবিতে বহিরাগতদের দেখেছেন তিনি। ষড়যন্ত্রকারীরা লাশ চাইছিল।

এক ছাত্র প্রক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে উপাচার্যকে বলেন, ‘স্যার (প্রক্টর) আমার অভিভাবক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। উনি আমাকে রক্ষা করবেন। উনি আমার বাবার বয়সী। উনি আমাকে বলেছেন, তোমাকে বহিষ্কার করব। পুলিশে দেব। আমার বুকটা ফেটে গেছে।’

এ সময় কয়েকজন ছাত্র বলেন, ‘স্যার দায়িত্ব পালন করতে না পারলে আপনি পদত্যাগ করেন। যদি মনে করেন, আপনি পারবেন না, তাহলে পদত্যাগ করেন। আমাদের গুলি করেন স্যার। আমাদের মেরে ফেলেন। আমরা কিছু করব না।’

তোপের মুখে উপাচার্য ও প্রক্টর হাসপাতালের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে থাকলে বিক্ষুব্ধরা নানা স্লোগান দেন।

হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুই দফায় নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীদের রড, লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। প্রথম দফায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ডাকসু ভবনে ঢুকে তাঁদের পেটান। এরপর ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক (ডাকসুর এজিএস) সাদ্দাম হুসাইন ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় হামলা ও মারধর করা হয়। এ সময় ডাকসু ভবনেও ভাঙচুর চালান ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী।

ডাকসু ভবন থেকে মিনিটখানেকের হাঁটা দূরত্বে কলাভবনের নিচতলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই মারধরের সময় প্রক্টর গোলাম রব্বানী তাঁর কার্যালয়েই ছিলেন। তিনি ঘটনাস্থলে যান মারধর শেষ হওয়ার পর। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনিসহ প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। ঘটনার সময় পুলিশের উপস্থিতি ছিল না।