রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তিন সদস্য ও চেয়ারম্যানের গাড়িচালকের বিরুদ্ধে ভাতাভোগী ব্যক্তিদের টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় একজন বিচারকের তৎপরতায় উপজেলা প্রশাসন ইউপি সদস্যদের পকেটে ভরা প্রায় দুই লাখ টাকা আজ শনিবার উদ্ধার করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের নতুন তালিকাভুক্ত প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ভাতাভোগী ব্যক্তিদের মধ্যে ভাতার টাকা বিতরণে গত বৃহস্পতিবার জনতা ব্যাংক মোহনগঞ্জ শাখায় ডেকে পাঠানো হয়। তাঁরা ব্যাংকের ওই শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন বলে জানানো হয়। ওই দিন সকালে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা ব্যাংকে এলে তিন ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের একজন গাড়িচালক তাঁদের ডেকে স্থানীয় মোহনগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের বারান্দায় নিয়ে বসান। সেখানে তাঁদের টাকা দেওয়া হবে বলে বসিয়ে রাখা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংকের অফিস সহায়ক রেন্টু হোসেনের মাধ্যমে ভাতাভোগী ব্যক্তিদের স্বাক্ষর জাল ও স্বজন পরিচয় দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকাগুলো তুলে নিয়ে দুপুরের পরে গণিপুর ইউপির সদস্য আবদুর রাজ্জাক, মজনুর রহমান, সাবদুল হোসেন ও চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হাসান আলী ওই কলেজে যান। তাঁরা এক হাজার করে টাকা পকেটে রেখে ভাতাভোগী ব্যক্তিদের মধ্যে টাকা বিতরণ শুরু করেন। টাকায় ভাগ বসানো হচ্ছে—এমন জানতে পেরে ওই এলাকার বাসিন্দা আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত জ্যেষ্ঠ সহকারী বিচারিক হাকিম হুমায়ন কবির ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ততক্ষণে ১৮১ জনের কাছ থেকে এক হাজার করে টাকা নিয়ে তা পকেটে ভরা হয়। তাঁর উপস্থিতি টের পেয়েই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা টাকা নিয়ে সটকে পড়েন। এ সময় ভাতাভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পান হুমায়ন কবির। পরে তিনি মুঠোফোনে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানান।
বিষয়টি জানার পর ইউএনও ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযোগের সত্যতা পান। পরে তিনি ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহ করে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যানের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তাঁর দপ্তরে যোগাযোগের নির্দেশ দেন।
আজ সকালে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ইউএনওর দপ্তরে আসেন। তাঁরা ব্যাংক থেকে ভাতাভোগীদের পক্ষে টাকা তুলে নেওয়া ও সেখানে ভাগ বসানোর কথা স্বীকার করেন। পরে পকেটে ভরা ১ লাখ ৮১ হাজার ২০০ টাকা ফেরত দেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়াবেন না বলেও মুচলেকা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ভাতা বিতরণ করে আসছেন বলে তাঁরা জানান।
ভাতাভোগী প্রতিবন্ধী শাহার বানু বলেন, বিচারকের কারণে পুরো টাকা ফেরত পেয়েছেন। চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যরা ভাতা দিয়ে থাকেন, এ জন্য যা দেন, তা–ই নিয়েই খুশি থাকেন। প্রতিবাদ করলে ভাতা বন্ধ হতে পারে—এমন আশঙ্কায় প্রতিবাদ করেননি। একই কথা বলেছেন ১২ থেকে ১৪ জন ভাতাভোগী। তবে তাঁদের টাকায় জনপ্রতিনিধিরা ভাগ বসাবেন, তা ভাবতে পারেননি।
ছুটিতে থাকা (পিএইচডি গবেষণাকাজে নিয়োজিত) জ্যেষ্ঠ সহকারী বিচারিক হাকিম হুমায়ন কবির প্রথম আলোকে বলেন, সমাজের অসহায় মানুষদের ভাতায় ভাগ বসানো বিষয়টি তাঁকে ব্যথিত করেছে। মানবিক তাড়নায় তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বলেন, ভাতাভোগী ব্যক্তিদের সুবিধার জন্য ব্যাংক থেকে একসঙ্গে টাকা তুলে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এর আগে তাঁরাসহ উপজেলার সব ইউনিয়নেই এই পদ্ধতিতে টাকা বিতরণ করে। তবে এক হাজার করে টাকা পকেটে রাখার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তাঁরা।
স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বলেন, তিনি ওই সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না। দাপ্তরিক কাজে উপজেলা পরিষদে গিয়েছিলেন। বিষয়টি জানার পর তিনি টাকা ফেরতের উদ্যোগ নিয়েছেন। কী কারণে এটা করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইউএনও জাকিউল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁরা এই ধরনের কোনো অপরাধ করবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন। টাকা পাওয়ায় ভাতাভোগীদের কোনো অভিযোগ নেই বলে তাঁকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকের প্রতিনিধি অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।