ঘরজামাইয়ের হাতে প্রাণ গেল শাশুড়ির

ভাগনের হাতে মামা ও ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

রাজশাহীর তানোরে গতকাল বৃহস্পতিবার এক কাঠা জমির জন্য ভাগনের হাতে মামা খুন হয়েছেন। এর আগে বুধবার রাজশাহীর বাগমারায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ছোট ভাইয়ের কোদালের আঘাতে বড় ভাই এবং নাটোরের বাগাতিপাড়ায় জামাইয়ের হাতে শাশুড়ি খুন হয়েছেন।

প্রথম আলোনিজস্ব প্রতিবেদক প্রতিনিধির পাঠানো খবর:

রাজশাহী: তানোরে ভাগনের হাতে নিহত মামার নাম খাইরুল ইসলাম। তিনি উপজেলার কালনা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। হামলাকারী ভাগনের নাম হাবিবুর রহমান। তাঁর বাবার নাম আজিম উদ্দিন। বাড়ি উপজেলার চাপড়া গ্রামে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলার কালনা গ্রামের নাজির উদ্দিন (৫৫), তাঁর ছোট ভাই খাইরুল ইসলাম (৪৮) ও সাইদুর রহমান (৪০) গতকাল সকালে কালনা মাঠের নিজ জমিতে আলু রোপণ করছিলেন।

এ সময় পাশের চাপড়া গ্রামের আজিম উদ্দিন (৬৫), তাঁর চার ছেলে আজাহার আলী (৪৫), হাফিজুর রহমান (৪২), আতার আলী (৩৮), হাবিবুরসহ (৩০) আরও ১০-১২ জন লাঠিসোঁটা, হাঁসুয়া ও বল্লম নিয়ে ওই জমি দখল করতে হামলা চালান। 

এ সময় ভাগনে হাবিবুরের হাঁসুয়ার কোপে মামা খাইরুলের গলা কেটে যায়। এ ছাড়া হামলায় সাইদুর ও নাজির গুরুতর জখম হন। এলাকাবাসী তাঁদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় খাইরুল মারা যান। অন্যদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাইদুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নিহত খাইরুলের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এক কাঠা জমি নিয়ে মামাদের সঙ্গে ভাগনেদের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এরই জেরে হঠাৎ তাঁরা এ হামলা চালান।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার পর থেকে হামলাকারীরা পলাতক রয়েছেন।

বাগমারা(রাজশাহী): বাগমারায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ছোট ভাইয়ের কোদালের আঘাতে নিহত বড় ভাইয়ের নাম আবদুর রহমান (৫০)। তিনি উপজেলার বড়বিহানালী পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সাত ব্যক্তি বলেন, গত বুধবার বিকেলে জমিজমা নিয়ে বড়বিহানালী পূর্বপাড়া গ্রামের দুই সহোদর আবদুর রহমান ও সিরাজ উদ্দিনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সিরাজ উদ্দিন তাঁর হাতে থাকা কোদাল দিয়ে বড় ভাই আবদুর রহমানকে পেটাতে থাকেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হলে তাঁকে ফেলে তিনি চলে যান। পরে লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গতকাল বিকেলে আবদুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বাগমারা থানার ওসি মতিয়ার রহমান বলেন, আবদুর রহমানের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি।

নাটোর: বাগাতিপাড়া উপজেলার চাঁপাপুকুর গ্রামে ঘরজামাইয়ের হাতে নিহত শাশুড়ির নাম রওশন আরা। গ্রামবাসী ওই জামাতাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।

এ ঘটনায় নিহত রওশন আরার ভাই শামসুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

বাগাতিপাড়া থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, রওশন আরার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল সকালে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আটক সাদেক আলীকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বাগাতিপাড়া থানার পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্র জানায়, উপজেলার চাঁপাপুকুর গ্রামের সাদেক আলীর সঙ্গে একই এলাকার ইয়াকুব আলীর মেয়ে সোহাগী খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সাদেক আলী শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই থাকতেন। শুরু থেকেই তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে বুধবার রাতে সাদেক তাঁর স্ত্রীকে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি তাঁর স্ত্রীকে বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করতে গেলে সেটি পাশে থাকা শাশুড়ি রওশন আরার মাথায় লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই রওশন আরার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন এসে সাদেক আলীকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশটি উদ্ধার করে এবং সাদেক আলীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

সোহাগী খাতুন দাবি করেন, তাঁর স্বামী সাদেক আলী লাঠি দিয়ে তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এ সময় তাঁর মা তাঁকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে লাঠির আঘাতে তিনি মারা যান।