বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে (২১) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই–বাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ ও আবরারের সহপাঠী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে হলের কক্ষে ছিলেন আবরার। হল থেকে তাঁকে রাতে কোনো একসময় বাইরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর কে বা কারা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। সহপাঠীরা জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবরার সক্রিয় ছিলেন। লেখালেখি করতেন। এ কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবরারের পায়ে ও ঊরুতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আঘাতজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। আমরা সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি। কারণ বুয়েট একটি সম্মানজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আমরা তদন্ত করছি।’
হল প্রভোস্ট মো. জাফর ইকবাল খান বলেন, ‘রাত পৌনে তিনটার দিকে খবর পাই এক শিক্ষার্থী হলের সামনে পড়ে আছে। কেন সে বাইরে গিয়েছিল, কী হয়েছিল, তা এখনো জানা যায়নি। তাৎক্ষণিকভাবে বুয়েটের চিকিৎসক দিয়ে তাঁকে পরীক্ষা করা হয়। ওই চিকিৎসক জানান তিনি বেঁচে নেই। পরে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ এসে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
বুয়েটের চিকিৎসক মাশুরুক এলাহী বলেন, ‘খবর পেয়ে তিনটার সময় ঘটনাস্থলে আসি। একতলা ও দোতলার মাঝামাঝি জায়গাতে আবরারকে পড়ে থাকতে দেখি। পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে বুঝতে পারি ছেলেটি বেঁচে নেই।’ কী কারণে আবরারের মৃত্যু হয়েছে? জানতে চাইলে মাশুক এলাহী বলেন, ‘আঘাতজনিত কারণে সে মারা গেছে। সেই সম্ভাবনাই বেশি।’
চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাত পৌনে ৩টার দিকে তাঁরা খবর পান শের-ই–বাংলা হলের বাইরে নিচতলায় একটি ছেলে পড়ে আছে। হল কর্তৃপক্ষই পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে যান তাঁরা। ছেলেটির পরনে ছিল ট্রাউজার ও শার্ট।
আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করে দেলোয়ার হোসেন বলেন, আঘাত কোনো অস্ত্রের নয়। কোনো কিছু দিয়ে বাড়ি দেওয়া হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শের-ই–বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে। আবরারের মামাতো ভাই জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবরারের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না। সে কুষ্টিয়ায় গিয়েছিল। গতকালই বিকেল পাঁচটায় কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসে হলে ওঠে। তারপর মধ্যরাতে খবর পাই ভাই মারা গেছে।’
আরও পড়ুন:
বুয়েট ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু