চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অস্ত্র নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমানের ছেলের সঙ্গে কক্সবাজার যাওয়ার দায়ে তাঁর দেহরক্ষী পুলিশ কনস্টেবল মো. মামুন ফকিরকে কিশোরগঞ্জ বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে বিভাগীয় তদন্তও চলবে।
গতকাল শনিবার বিকেলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবাস চন্দ্র সাহা কনস্টেবল মামুন ফকিরের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পান এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন তাঁকে কিশোরগঞ্জ বদলির আদেশ দেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলবে বলে নির্দেশ দেন।
২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সংসদ সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সভাপতিত্বে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সংসদ সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের নিরাপত্তায় গানম্যান দেওয়া যাবে। সংসদ সদস্যরা শুধু সংসদীয় এলাকায় দেহরক্ষীর নিরাপত্তা পাবেন। সাংসদ নির্বাচনী এলাকার বাইরে চলে গেলে নিরাপত্তায় নিয়োজিত দেহরক্ষী নিজ নিজ ইউনিটে রিপোর্ট করবেন। এই নিরাপত্তা শুধু সাংসদেরাই পাবেন। তাঁদের স্ত্রী, সন্তান বা পরিবারের কেউ পাবেন না। কিন্তু সাংসদের ছেলে অয়ন ওসমানের ক্ষেত্রে এ আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী এলাকায় সাংসদ শামীম ওসমানের নিরাপত্তায় দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কনস্টেবল মামুন ফকির। কিন্তু তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া শামীম ওসমানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন না করে তাঁর ছেলে অয়ন ওসমানের সঙ্গে ১৪ থেকে ১৭ মার্চ অস্ত্র–গুলিসহ কক্সবাজারে অবস্থান করেন। এটি চাকরিবিধি আইনের পরিপন্থী। ওই সময় সাংসদ শামীম ওসমান দেহরক্ষী ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করেছেন। এটা সাংসদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ ঘটনা তদন্তে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুবাস চন্দ্র সাহাকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
সুবাস চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। মামুন সাংসদ শামীম ওসমানের দেহরক্ষী হলেও তাঁকে প্রায়ই অয়ন ওসমানের দেহরক্ষী হয়ে বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে। এ ছাড়া কনস্টেবল মামুন প্রায়ই সাংসদের সঙ্গে নির্বাচনী এলাকার বাইরে অবস্থান করেন।
জেলা পুলিশ লাইনস সূত্রে জানা গেছে, কনস্টেবল মামুন ২০০৭ সালের ২২ আগস্ট পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০১৩ সালের ৪ নভেম্বর থেকে নারায়ণগঞ্জে যোগ দেন। এরপর থেকে তিনি সাংসদ শামীম ওসমানের দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত আছেন। এর আগে কনস্টেবল মামুন এপিবিএন চট্টগ্রামে ছিলেন। কনস্টেবল মামুন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে পুলিশ লাইনসে কোনো রিপোর্ট না করে চলাফেলা করেন। নিয়ম অনুযায়ী, ডিউটিতে থাকা ছাড়া বাকি সময় পুলিশ লাইনসে হাজির থাকার নিয়ম। শামীম ওসমানের দেহরক্ষী হওয়ার পর থেকে কনস্টেবল মামুন কোনো দিন পুলিশ লাইনসে রিপোর্ট করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মামুন ফকিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন শামীম ওসমানের দেহরক্ষী মামুন ফকিরকে কিশোরগঞ্জ বদলির আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে কনস্টেবল মামুনের বিরুদ্ধে পুলিশের ওয়্যারলেস সেট (বেতারবার্তার যন্ত্র) ব্যবহার করে পুলিশের গতিবিধি ও গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে বেতারযন্ত্রটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
২২ মার্চ ‘শামীম ওসমানের দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়।