বিদ্যুতের মিটার চুরি করে ফোনে টাকা আদায়

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

প্রথমে পল্লী বিদ্যুতের মিটার চুরি করে চক্রটি। এরপর তারা মিটারের জায়গায় মুঠোফোন নম্বর রেখে যায়। সেই নম্বরে কল করলে বলা হয়, ফোনে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পাঠালে মিটার ফেরত পাওয়া যাবে। টাকা পাঠালে রাতে মিটার রেখে যাওয়া হয়। একই সঙ্গে বিষয়টি পুলিশকে না জানানোর জন্যও সতর্ক করা হয়। এভাবে প্রতারক চক্রটির খপ্পরে পড়ে অনেকে টাকা পাঠিয়ে চুরি যাওয়া মিটার ফেরত পেয়েছেন। অভিনব প্রতারণার এ ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায়।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাঘাটার বিভিন্ন গ্রামে প্রতারণার মাধ্যমে সেচ ও চাতালকলে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনা ঘটছে। গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ১২টি মিটার চুরি হয়েছে। পরে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে সবগুলো মিটার ফেরত পাওয়া গেছে। সেচপাম্প ও চাতালকলের প্রতিটি মিটারের দাম ১১ থেকে ২৩ হাজার টাকা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয় থেকে এসব মিটার কেনা যায়।

মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে মিটার চুরির পরও পুলিশ ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
কামালেরপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জয়নুল আবেদীনের অভিযোগ

সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, এসব মিটার চুরির ঘটনায় থানায় কেবল একটি জিডি হয়েছে।
গোরেরপাড়া গ্রামের চাতালকলের মালিক শাহিন আলম জানান, সম্প্রতি এক রাতে তাঁর চাতালকলের একটি মিটার চুরি হয়ে যায়। সকালে উঠে দেখেন, মিটার নেই। কিন্তু মিটারের জায়গায় একটি মুঠোফোন নম্বর লেখা। তিনি নম্বরটিতে ফোন দেন। ওপাশ থেকে মিটার ফেরতের জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। বিষয়টি থানায় জানানোর পরও কোনো প্রতিকার পাননি। পরে প্রতারক চক্রের দেওয়া একটি নম্বরে আট হাজার টাকা পাঠান। টাকা পাওয়ার পর তারা মিটারটি কোথায় পাওয়া যাবে, তা জানিয়ে দেয়। পরের দিন রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গা থেকে মিটারটি উদ্ধার করা হয়।

বোনারপাড়া গ্রামের চাতালমালিক মোখছেদুর রহমান জানান, তাঁর চাতালকলের মিটার চুরির পর থানায় জিডি করেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রতিকার পাননি। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে প্রতারক চক্রের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তারা টাকা ছাড়া মিটার দিতে রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে তাদের দেওয়া নম্বরে ছয় হাজার টাকা পাঠান। কয়েক দিন পর তাদের দেওয়া ঠিকানা থেকে তাঁর মিটার উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, গত সাত দিনে তাঁর এলাকায় পাঁচটি মিটার চুরি হয়েছে।


কামালেরপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জয়নুল আবেদীন অভিযোগ করেন, মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে মিটার চুরির পরও পুলিশ ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।


এ বিষয়ে গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মো. ছানাউল্লাহ বলেন, ‘মিটার চুরির বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে, কারা এ চুরির সঙ্গে জড়িত।’


একই বিষয়ে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সাঘাটা এলাকায় মিটার চুরির অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারক চক্রকে ধরার চেষ্টা চলছে।