বরিশালে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) করোনাভাইরাস-বিষয়ক সেবা কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বুধবার সকাল থেকে দফায় দফায় হট্টগোলের পর দুপুরে পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এলাকাজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে বাসদ বরিশালে মানবতার বাজার, অক্সিজেন ব্যাংক এবং মানবতার অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। নগরের ফকির বাড়ি রোডের একটি বিদ্যালয় ভবন থেকে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। মাতৃছায়া শিশু কানন নামের ভবনটির মালিক হাসান ইমাম চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। তাঁর কাছ থেকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ভবনটি ভাড়ায় নেন বরিশাল সিটি কলেজের অধ্যক্ষ সুজিৎ কুমার দেবনাথ। সেখানে তিনি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালান। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ। তাই সুজিৎ কুমার দেবনাথের অনুমতি নিয়ে বিনা ভাড়ায় বিদ্যালয়ের চারটি কক্ষে গত ১৮ মার্চ থেকে মানবতায় সেবায় বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করে বাসদ।
বাসদ বরিশাল জেলা কমিটির সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি অধ্যক্ষ সুজিৎ কুমার দেবনাথ একটি বিশেষ মহলের প্ররোচনায় পড়েন। তিনি ভবনটিতে মানবতার কার্যক্রম চালানোর জন্য ভাড়ার পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম দাবি করেন। কিন্তু বাসদের পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। দলের পক্ষ থেকে শুধু ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাতে সুজিৎ কুমার সম্মত না হয়ে কক্ষ ছেড়ে দিতে নানা ধরনের চাপ দেন।
মনীষা চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘আমরা নতুন জায়গা পাওয়ার পর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তিনি তাতেও সম্মত না হয়ে ভাড়াটে মস্তান এনে আমাদের নেতা-কর্মীদের হুমকি দিতে থাকেন। পরে ভবনের মালিকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা আমরা কথা বলি। তিনি আমাদের কোনো রকম ভাড়া ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলেন। সুজিৎ কুমারের সঙ্গে তাঁর (ভবন মালিক) ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ এক বছর আগে শেষ হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি আমাদের সতর্ক করে দেন, তাঁর (সুজিৎ কুমার) সঙ্গে আমরা যেন কোনো ধরনের ভাড়ার চুক্তি না করি।’
বাসদের নেতা-কর্মীরা বলছেন, তাঁদের সঙ্গে ভবনের মালিকের যোগাযোগের বিষয়টি জেনে যান অধ্যক্ষ সুজিৎ কুমার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি মঙ্গলবার রাতে ভবনের পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ ছাড়া ভবনে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেন। সুজিৎ কুমার এর আগে ২৬ জুলাই মনীষা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বরিশাল কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, ভবনটির প্রবেশপথ বন্ধ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা নিয়ে বুধবার সকালে নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে বাসদের সমর্থক নজরুল ইসলাম খানকে ১০টার দিকে মারধর করেন অধ্যক্ষ সুজিৎ কুমার দেবনাথ ও তাঁর অনুসারীরা। খবর পেয়ে বাসদের শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা ধাওয়া করলে সুজিৎ কুমার স্কুল ভবনের একটি কক্ষে আশ্রয় নেন। শ্রমিকেরা তাঁকে ওই কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তারা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও শ্রমিকেরা পিছু হটেননি। এরই মধ্যে তাঁরা সুজিৎ কুমারের অনুসারী জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ও যুবলীগের নেতা সুভাশীষ ঘোষের ওপর হামলা করেন। তাঁকে মারধর করে পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলেন বাসদের নেতা-কর্মীরা।
খবর পেয়ে আইনজীবীর অনুসারী স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা অধ্যক্ষ এবং আইনজীবীকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে বাসদ কর্মীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা, হাতাহাতি এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে স্থানীয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গাজী আক্তারুজ্জামানসহ অন্যরা ছুটে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বেলা দুইটার দিকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় অধ্যক্ষ সুজিৎ কুমারকে মুক্ত করে নিয়ে যায় পুলিশ।
ঘটনাস্থলে থাকা ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘বাসদ করোনা পরিস্থিতিতে এখানে যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ভয় কাজ করছে। তাঁরা মনে করছেন, এ কার্যক্রমের মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই তাঁরা এখান থেকে বাসদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। আমরাও চাই, এখান থেকে এই কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হোক।’
বাসদের সমর্থক নজরুল ইসলাম খানকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ সুজিৎ কুমার। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের হামলা বা মারধর করিনি। বরং নজরুলই এসে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এমনকি আমার আত্মীয় আইনজীবী শুভাশীষের ওপর হামলা করেন।’
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, উভয় পক্ষের কাছ থেকেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটি সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করছেন। তাতে কাজ না হলে পরবর্তী সময়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।