মুঠোফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন মাধ্যমে বিত্তশালী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন চক্রের নারী সদস্যরা। বাসায় ডেকে নিয়ে তোলা হয় আপত্তিকর ছবি। দাবি করা হয় লাখ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে সেখানে হাজির হয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া কিংবা গণমাধ্যমে প্রকাশের ভয় দেখান চক্রের সদস্য ভুয়া সাংবাদিকেরা। লোকলজ্জার ভয়ে ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা টাকা দিয়ে মুক্তি পান। প্রতারক চক্রের সদস্য দুই নারীসহ পাঁচজনকে গত শুক্রবার গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এসব তথ্য জানতে পারে। পাঁচ বছর ধরে নগরের পাঁচলাইশ, বায়েজিদ বোস্তামী, পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা এভাবে প্রতারণা করে আসছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। পাঁচ আসামি হলেন দিদারুল ইসলাম, ফাতেমা ইয়াসমিন, মোস্তফা সিফা, আনোয়ার হোসেন ও রাকিব আল ইমরান।
যেভাবে প্রতারণা করেন
দিদার ও ফাতেমা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। বাসার বসার ঘরে কিছু আসবাব রাখা হয়। বাকিগুলো খালি থাকে। এরপর চক্রের নারী সদস্যরা টার্গেট করে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিত্তশালীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে বাসায় আসার নিমন্ত্রণ জানান। আসার পর নারী সদস্যদের দিয়ে আপত্তিকর ছবি তোলা হয়। আবার কখনো ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক দিয়ে ফাঁসানো হয়। চক্রের সদস্যরা পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয়ে সেই বাসায় যান। একদিকে ছবি তুলে ছাপানোর হুমকি, অন্যদিকে পুলিশ পরিচয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড়। লোকলজ্জার ভয়ে তাঁরা টাকা দিতে বাধ্য হন। কেউ পুলিশ কিংবা কাউকে বিষয়টি জানান না।
একটি বাসায় এভাবে কয়েকটি ঘটনা ঘটার পর চক্রের সদস্যরা দ্রুত বাসা পরিবর্তন করে ফেলেন। বাড়ির মালিক বাসায় আসবাব নিয়ে আসার কথা বললে নানা টালবাহানা করতে থাকেন।
যেভাবে ধরা পড়েন
নগরের নূপুর মার্কেটের এক ব্যবসায়ীকে ২ মার্চ কাজীর দেউড়ি এলাকা থেকে পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ করে নিয়ে যান চক্রের সদস্যরা। পরে তাঁকে নগরের চশমা হিলের একটি বাসায় আটকে রাখা হয়। সেখানে তাঁর সঙ্গে চক্রের নারী সদস্যদের আপত্তিকর ছবি তুলে রাখা হয়। এগুলো প্রকাশের হুমকি দেন সাংবাদিক পরিচয়ে চক্রের এক সদস্য। তাঁরা দুই লাখ টাকা দাবি করলেও ভুক্তভোগীর এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পান ওই ব্যবসায়ী। পরে বিষয়টি মৌখিকভাবে কোতোয়ালি থানার পুলিশকে জানানোর পর অভিযান শুরু হয়। গত শুক্রবার রাতে নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। পলাতক রয়েছেন মূলহোতা কামরুল হাসান।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতারক চক্রের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ। সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি অঞ্চল) এস এম মোবাশ্বের হোসেন। কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন। পরিদর্শক তদন্ত মো. কামরুজ্জামান।
অভিযান পরিচালনাকারী কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার হয়ে মুক্তি পেয়ে তাঁরা আবার এই প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন।