বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি শিয়া মসজিদে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন মোয়াজ্জেম হোসেন (৭০) নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মসজিদের ইমামসহ তিনজন। আহত লোকজনকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এটা দেশি-বিদেশি চক্রান্ত। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ হামলার তদন্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুব দক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় কারা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে, কেন ঘটিয়েছে, তার তদন্তে কাজ শুরু হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে আইএস আছে, সেটা প্রমাণ করতেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সব ঘটনা একই গোষ্ঠী ঘটিয়েছে। তারা দেশের একেকটি জেলায় একেকবার নাশকতামূলক কার্যক্রম করছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে, যাতে সেটা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনা হয়। ঘটনাগুলো একের পর এক মেলালে বোঝা যাবে। তবে সরকারও বসে নেই, সবই বেরিয়ে আসছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আজ সন্ধ্যার দিকে উপজেলার চককানু গ্রামের ওই শিয়া মসজিদে তিন-চারজন যুবক ঢুকে পড়েন। এ সময় মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন অন্তত ৪০ জন মুসল্লি। যুবকেরা মসজিদে ঢুকে প্রথমে প্রধান ফটকটি আটকে দেন। এরপর আগ্নেয়াস্ত্র বের করে নামাজরত লোকজনকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান। এতে ইমাম শাহীনুর রহমান, মুয়াজ্জিন মোয়াজ্জেম হোসেন, আবু তাহের ও আফতাব উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে আফতাব ছাড়া অন্য তিনজনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে মোয়াজ্জেম হোসেন মারা যান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উকিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শিয়া সম্প্রদায়ের মুসল্লিরা মাগরিব ও এশার নামাজ একই সঙ্গে আদায় করেন। তাঁরা সবাই মাগরিবের নামাজ আদায় করে এশার নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ চারটি গুলির শব্দ হয়। চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর আতঙ্কে তাঁরা মসজিদে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন।
আজ রাত পৌনে আটটার দিকে ওই মসজিদের গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য উপস্থিত হয়েছেন। মসজিদের মেঝেতে ছোপ ছোপ রক্ত। মসজিদের কয়েকটি স্তম্ভে গুলির চিহ্ন। খবর শুনে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ভিড় করছে। মসজিদের ভেতরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আলামত সংগ্রহ করছে পুলিশ। সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় লোকজনের তথ্যমতে, গোলাগুলির শব্দ শুনে তাঁরা কয়েকজন মসজিদের দিকে দৌড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু গুলিবর্ষণকারীরা আগেই মসজিদে প্রবেশের মূল ফটকটি ভেতর থেকে বন্ধ করে রাখায় তাঁরা ঢুকতে পারেননি। খুব দ্রুত ঘটনা ঘটিয়ে গুলিবর্ষণকারীরা মসজিদের সামনের দেয়াল টপকে পালিয়ে যান।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, কে বা কারা কেন এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।